চলতি বছরের ১ জুলাইয়ের পর থেকে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার চাকরিতে যারা নতুন যোগ দেবেন, বিদ্যমান ব্যবস্থার মতো আর অবসর-উত্তর পেনশন সুবিধা পাবেন না তারা। এর পরিবর্তে বাধ্যতামূলক সর্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্ত করা হবে নতুনদের।
সম্প্রতি এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দেশের সব স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোর চাকরিতে যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারী চলতি বছরের ১ জুলাইয়ের পর যোগ দেবেন, সরকার তাদের সর্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্ত করল।
প্রসঙ্গত, চারটি আলাদা কর্মসূচি (স্কিম) নিয়ে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার যাত্রা শুরু হয় গত বছরের ১৭ আগস্ট, যার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্কিমগুলো হচ্ছে প্রগতি, সুরক্ষা, প্রবাস ও সমতা। প্রগতি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারীদের জন্য। সমতা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী (যাদের আয়সীমা বার্ষিক অনূর্ধ্ব ৬০ হাজার টাকা) স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য। প্রবাস শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য। আর সুরক্ষা রিকশাচালক, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য।
সর্বজনীন পেনশনে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী একজন সুবিধাভোগী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সের সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা দেওয়া সাপেক্ষে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন।
আর সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোতে এখন পর্যন্ত চালু পেনশন সুবিধা অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীরা সাধারণ ভবিষ্য তহবিল (জিপিএফ) এবং স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো প্রদেয় ভবিষ্য তহবিলে (সিপিএফ) টাকা জমা রাখেন, যার বিনিময়ে সরকার ১১ থেকে ১৩ শতাংশ হারে সুদ দেয়। পেনশনে যাওয়ার পর এ টাকা পেয়ে থাকেন অবসরভোগীরা। যেসব সরকারি কর্মচারী রাজস্ব খাত থেকে বেতন পান, তারা টাকা রাখেন জিপিএফে। আর যারা রাজস্ব খাতের বাইরে থেকে বেতন পান, তারা টাকা রাখেন সিপিএফে।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে সরকার, তারই অংশ হিসেবে এ দফায় নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সংস্থাগুলোতে আগামী ১ জুলাইয়ের পর যারা নতুন চাকরিতে যোগ দেবেন, তাদের জন্য ‘প্রত্যয়’ নামের একটি কর্মসূচি চালুর চিন্তা রয়েছে কর্তৃপক্ষের।
উল্লেখ্য, বর্তমানে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মিলে প্রায় ৪০০ সংস্থা রয়েছে, যেগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন ৪ লাখের বেশি। এ ধরনের সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সাধারণ বীমা করপোরেশনসহ সব করপোরেশন, পেট্রোবাংলা, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), বিএসটিআই ইত্যাদি।