দেশে রমজান এলেই নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়তে। এছাড়াও চলমান নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাজেহাল মানুষ। দাম বৃদ্ধিতে সরকারের নানা নির্দেশনা দেওয়া হলেও তোয়াক্কা নেই ব্যবসায়ীদের। অতি মুনাফার আশায় অসাধু ব্যবসায়ীরা যেকোনো পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে সাধারণ মানুষের কাছে থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংশ্লিষ্টরা কাজ করলেও খুব বেশি একটা সুফল পান না ভোক্তারা। বলা চলে, বরাবরের মতোই সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দেদারসে ব্যবসা পরিচালনা করছেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, নিত্যপণ্যের চলমান ঊর্ধ্বগতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে শুক্রবার (১৫ মার্চ) ডাল, ডিম, মাংস, পেঁয়াজসহ ২৯ পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। নির্ধারিত দামে এসব পণ্যের কিছুই মিলছে না। কয়েকটি স্থানে ২৯ পণ্যের মধ্যে মাত্র ৪টি পণ্য সঠিক দামে বিক্রি করতে দেখা যায়। সেগুলো হলো, কাতল মাছ, খাসির মাংস, সিম ও বেসন। এছাড়াও বকি ২৫ পণ্য ঠিক আগের দামেই বিক্রি করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও তা অনেকেই জানেন না বলে মত ব্যবসায়ীদের।
তাদের ভাষ্য, সরকারের পক্ষ থেকে পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া হলেও সেই দামে আড়তে পণ্য মিলছে না। এছাড়াও রোজার আগেই এক মাসের জন্য অধিকাংশ পণ্য মজুত করার কারণে নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।
জানতে চাইলে আবু ইউসুফ নামের এক ব্যবসায়ী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমরা রোজার আগেই সরকারের বেঁধে দেওয়া অধিকাংশ পণ্য মজুত করে রেখেছি। শুধু আমি একা নই অধিকাংশ ব্যবসায়ীরাই আমার মতো পণ্য মজুত করে রেখেছেন। তবে কাঁচা বাজারের কী খবর সেটা বলতে পারব না। রোজার শুরুতে যদি সরকার বেঁধে দেওয়া, বেঁধে দেওয়া খেলা খেলে তাহলে আমাদের মতো ব্যবসায়ীরা বেশি দামে কেনা পণ্যে অনেক লোকসানের মধ্যে পড়ে যাবে।”
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে আবু ইউসুফ বলেন, “অনেকেই বলে ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা লাভ। কিন্তু আমরা সেই কোটি টাকা তো দূরের কথা লাখ টাকাও চোখে দেখি না। শুধু কিছু একটা হলেই বাজারে ভোক্তা নেমে আমাদের জরিমানা করে যায়। ব্যবসায় লাভ করে সংসার চালাব কি, আরও মানুষের কাছে ধার করে এনে ভোক্তার জরিমানা পরিশোধ করতে হয়। এই হচ্ছে আমাদের দেশে ব্যবসার রীতিনীতি। বড় ব্যবসায়ীদের যদি দমন করা না যায়, তাহলে সিন্ডিকেট রোধও হবে না। আর বাজারে আমরা ব্যবসা করে শান্তিও পাবে না।”
বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাঙ্গাশ (চাষের) প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা, কাতল ৩০০-৩৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, ছাগলের মাংস এক হাজার টাকা, ব্রয়লার মুরগি ২১০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা, ডিম প্রতি ডজন ১২০-১৩০, দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৭০ টাকা, দেশি রসুন ১৪০ টাকা, আমদানি করা আদা ২০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১০০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি পিস ৫০ টাকা, ফুলকপি ৭০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ৬০-৬৫ টাকা, সিম ৪৫ টাকা, আলু ৪০-৪৫ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি পিস ১২০ টাকা, খেজুর জিহাদি ১৮০ টাকা, মোটা চিড়া প্রতি কেজি ৮০ টাকা, সাগর কলা ৩৫ টাকা হালি, বেসন প্রতি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও দেশি মুগ ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা, মাসকালাই ১৮৫ টাকা, ছোলা (আমদানি) ১১০ টাকা, খেসারি ডাল ১৪০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
গত দুই দিন আগেও রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ কিনেছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নাজমুল হোসেন। কিন্তু আজ আধা কেজি কাঁচা মরিচের দাম ৫০ টাকা হাঁকাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। অর্থাৎ এক কেজি কাঁচা মরিচের দামে এখন আধা কেজি কাঁচা মরিচ পাওয়া যাচ্ছে। হুট করেই কাঁচা মরিচের এমন দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকটাই ক্ষুব্ধ হয়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের দোষী করে নানা অভিযোগ দিলেন এই প্রতিবেদকের কাছে। এছাড়াও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের সঙ্গে রাজনৈতিক মহল দায়ী থাকার কারণে বাজারে শান্তি ফিরে আসছে না বলেও জানালেন তিনি।
নাজমুল হোসেন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “কাঁচা মরিচ শ্রেণিভেদে ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেগুন ৬০-৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আলুর কেজি কিছুদিন আগে ৩০ টাকা ছিল, কিন্তু এখন সেই একই আলু কেজি দরে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এভাবেই দিনকে দিন বাজারে অধিকাংশ জিনিসের দামই নীরবে বাড়ছে। এমনভাবে বাড়ছে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। আমরা না পারছি কিছু কিনে খেতে, না পারছি কারও কাছে কিছু বলতে। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে এখন সাধারণ মানুষ নীরবে কান্না করা ছাড়া আর কিছুই নেই।”
নাজমুল হোসেন আরও বলেন, “রমজান এলেই যেভাবে পণ্যের দাম বাড়ে, রজমানের আগে সেভাবে বাড়ে না। ব্যবসায়ীরা যদি ১০ টাকা দাম বাড়ায় সরকার সেখানে ৫ টাকা কমায়। বাকি ৫ টাকা পণ্যের মূল্যে থেকেই যায়। সব জিনিসেই এমন নীরবে হয়ত সরকার দাম বাড়ায় নয়তো ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ায়। সরকার নতুন করে যে দাম বেড়ে দিয়েছে, যা আদৌ কি কার্যকর হবে কি না তা নিয়ে আমরা সংশয়ে আছি।”