এই তো সেদিন, প্রায় চার হাজার শব্দের একটি শোকের সালতামামি করলাম। আপনাকে বললাম, “ভাই, আজকের তারিখে শোকের সালতামামিটা রাখছি, একটু চোখ বুলিয়ে দেন।” আপনি দেখেই বললেন, “এটা তো অনেক বড়। এ বছর এত লোক মারা গেছে, আরেকটু ছোট করা যেত না।” বললাম, “আরও ছিল, বাদ দিয়েই ৩১ জনকে রাখছি। ওনাদের কাউকে বাদ দিতে পারছিলাম না!” বললেন, “আচ্ছা, করছ করছই। সমস্যা নাই। যেহেতু বড় হয়ে গেছে, দুই পার্ট করে দাও।” কিছুক্ষণ পর আবার বললেন, “একটাই দাও, দুইটার প্রয়োজন নেই।” নিউজটা তোলার পর খুব খুশি হলেন। গ্রুপেও তা জানালেন। আজ আপনি নিজেই শোকের তালিকায় চলে গেলেন।
বিশ্বাস হচ্ছে না। এখনো মনে হচ্ছে, এই বুঝি কাঁধে হাত রেখে বলছেন, “কী অবস্থা, তোমার ছেলে কেমন আছে, বাবা ডাকে?”
সংবাদ প্রকাশে যোগ দেওয়ার কিছুদিন পরই তো আমাদের (সংবাদ প্রকাশের) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সব সহকর্মীকে নিয়ে লিখলেন—সংবাদ প্রকাশ ও আমরা যেমন নামে। কে কেমন, কী কাজ করেন! কয়েক লাইনেই তো প্রায় সবার বিবরণ দিলেন! আগামীতে আমাদের নিয়ে কে লিখবে ভাই?
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) দীর্ঘ সাপ্তাহিক মিটিং হলো। সবার কথা শুনলেন। শেষ সময়ে কিছু কথা বললেন। আমরা দেখলাম, ঠিকভাবে কথা বলতে পারছেন না। কথা কেমন জানি জড়িয়ে যাচ্ছিল। এক মিনিটের মতো কথা বললেন। মিটিং শেষে নিজেই বললেন, “আমার প্রেশার উঠে গেছে।” বিধানদা বললেন, “মাথায় হালকা একটু পানি দেন ভাই।” এরপর পানি দিয়ে এসে স্বাভাবিক হলেন।
মিটিংয়ের পর থেকে কয়েকবার ভাবলাম, আপনাকে গিয়ে বলব, ভাই তিন-চার দিনের ছুটি নেন। আপনার শরীরটা মনে হয় ভালো না।
বুধবার আপনি কোন দিক দিয়ে চলে গেলেন। বলতে বলতে গিয়েও আপনার শরীর খারাপের কথাটি আর আপনাকে বলতে পারলাম না। ভাবলাম কালকে এসে বলব। বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) কাজের চাপে বলব বলব করেও বলতে পারলাম না। এদিনও কোন দিক দিয়ে চলে গেলেন! প্রণবদাকে জিজ্ঞেস করলাম, উনি জানালেন, আপনি চলে গেছেন।
প্রতিদিনই যাওয়ার আগে আমাকে বলে বের হন। “মামুন থাকো, বের হলাম।” শেষের জন্য কোনো লিড নিউজ থাকলে রেখে যেতেন। না থাকলে বলতেন, “আজ ওই রকম কিছু নাই। তুমি পারলে শেষে একটা তুলে দিয়ো।” এখন এভাবে কে বলবে? ভাবতেই কেমন লাগছে!
শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) সহকর্মী সোহেল ভাইয়ের কাছ থেকে হঠাৎ যখন শুনলাম, আপনি নেই, বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। এরপর হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে যখন আপনার মুখটা দেখলাম, পুরো শরীর শিউরে উঠল! অঝোরে ঝরল চোখের পানি। মাথায় হাত বুলিয়ে আপনার কাছ থেকে চিরবিদায় নিলাম।
হাসপাতাল থেকে বাসায় আসার পর থেকে আপনার বিভিন্ন স্মৃতি চোখে ভাসছে। আর আপনাকে শেষ কথাটি বলতে না পারার আক্ষেপ হচ্ছে। আজ আপনি অফিসে নেই। শূন্য মনে হচ্ছে। আপনার ডেস্কের দিকে তাকালে মন ভারী হয়ে যাচ্ছে। ঠিক আবদ্ধ ঘরে নিশ্বাস নেওয়ার মতো!
আপনার প্রতি অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। ওপারে খুব ভালো থাকবেন প্রিয় ওমর ফারুক শামীম ভাই।