রাজধানীর হাতিরঝিল থেকে বেসরকারি জিটিভির নারী সাংবাদিক রাহনুমা সারার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া তার স্ট্যাটাস নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) মধ্যরাতে হাতিরঝিলের লেকে ডুবে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে ফেসবুক স্ট্যাটাসে আত্মহত্যার কথা লিখেছিলেন রাহনুমা।
রাহনুমার ফেসবুক প্রোফাইল ঘুরে দেখা যায়, ১১ ঘণ্টা আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে তোলা ছবি শেয়ার দিয়েছেন তিনি। আত্মহত্যার আগে তিনি তার ফেসবুক প্রোফাইলে বন্ধু ফাহিম ফয়সাল ও তার স্বপ্নের কথাগুলো তুলে ধরেছেন। স্বপ্ন পূরণে উভয়ের পরিকল্পনাও ছিল অসংখ্য। সেগুলোর কথাও তুলে ধরেছেন রাহনুমা। কিন্তু স্বপ্নগুলো পূরণ হয়নি কী কারণে, তা তিনি উল্লেখ করেননি।
বন্ধুর প্রশংসা করে তার উদ্দেশে লিখেছেন, “তোমার মতো বন্ধু থাকা অসাধারণ ব্যাপার। সবার ভাগ্যে তা জোটে না। আমি জানি আমাদের অনেক স্বপ্ন। কিন্তু আমাদের স্বপ্নগুলো আমরা পূরণ করতে পারিনি। এ কথা বলার পর রাহনুমা তার বন্ধুর মঙ্গল কামনা করে জীবনের সব ক্ষেত্রে সফলতা কামনা করে বলেছেন, আল্লাহ তোমার ভালো করুন।”
১২ ঘণ্টা আগে ফেসবুকে দেওয়া অপর এক পোস্টে রাহনুমা লেখেন, “জীবন্মৃত হয়ে থাকার চাইতে মরে যাওয়াই ভালো।”
রাহানুমার স্বামীর ভাষ্য, তিনি পানিতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে পুলিশ বলেছে, এটা আত্মহত্যা নাকি হত্যা, তা লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে বলা যাবে।
স্বামী সায়েদ শুভ্র বলেন, মঙ্গলবার রাহানুমা অফিসে গিয়েছিলেন। রাতে বাসায় না ফিরে এক ব্যক্তিকে দিয়ে বাসাভাড়ার টাকা পাঠিয়ে দেন। তিনি তাকে ফোন করেন। বলেন, বাসায় না এসে অন্যকে দিয়ে কেন টাকা পাঠিয়েছ? তখন রাহানুমা বলেন, তিনি ব্যস্ত আছেন। এই বলে ফোন রেখে দেন। দিবাগত রাত তিনটার দিকে তিনি খবর পান, রাহানুমা হাতিরঝিল লেকের পানিতে ঝাঁপ দিয়েছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজে গিয়ে তিনি রাহানুমার লাশ দেখতে পান।
সায়েদ শুভ্র আরও বলেন, প্রেম করে সাত বছর আগে তারা পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করেছিলেন। তাদের মধ্যে কোনো ঝগড়া হয়নি। তবে বেশ কিছুদিন আগে থেকে রাহানুমা আলাদা হয়ে যেতে চাইছিলেন। তারা কাজি অফিসে গিয়ে বিবাহবিচ্ছেদ সম্পন্ন করতে চেয়েছিলেন। তবে দেশের পরিস্থিতির কারণে তা আর করা হয়নি।
হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, হাতিরঝিল লেকের পানিতে রাহানুমার নিথর দেহ ভাসছিল। পথচারীরা দেখে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এটা আত্মহত্যা নাকি হত্যা, তা লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে বলা যাবে। তার বাবা নোয়াখালী থেকে ঢাকায় এসেছেন। তিনি থানায় যে অভিযোগ দেবেন, সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, মঙ্গলবার রাত পৌনে দুইটার দিকে রাহনুমাকে নিথর অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন পথচারীরা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। তার লাশ কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে।
জিটিভির নিউজরুম এডিটর হিসেবে কাজ করা রাহনুমার বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। তিনি রাজধানীর হলিক্রস কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করার পর বেসরকারি শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর কর্মজীবনে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।