বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাদানকারীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরুর কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ এ নিয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন নয় বলে জানিয়েছেন দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ বলেন, “এটি তো নতুন নয়। আগেও তারা ভিসা নীতি ঘোষণা করেছিল। এটা নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু আছে বলে মনে করি না। আমার মনে হয় না কোনো চাপ আমাদের ওপর আছে। কারণ, আমাদের একটাই কথা, আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। আমরা সেটাই করব।”
ড. শাম্মী বলেন, “আমি মনে করি এমন ভিসা নীতি তারা যদি ২০১৪ ও ১৮ সালে দিত, তাহলে বিএনপি দেশজুড়ে জ্বালাও-পোড়াও করতে পারত না, ভয় পেত। আওয়ামী লীগের এটা নিয়ে চিন্তা বা ভয়ের কিছু আছে বলে তো আমি মনে করি না।”
আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতিতে সবচেয়ে বিপাকে পড়বে বিএনপি-জামায়াত। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে দলটির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা গণতান্ত্রিক পন্থা বাদ দিয়ে অগণতান্ত্রিক পথ খুঁজছে এবং ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।” তিনি বলেন, “জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সব সময় নির্বাচনের পক্ষে এবং সব গণতান্ত্রিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক, সেটা নিশ্চিত করতে চায়।” ভিসা নীতিতে আওয়ামী লীগের কিছু আসে-যায় না বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, “বিএনপির কারণে আজকে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি কার্যকর করেছে। কারণ, বিএনপি গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচন হোক, এটা চায় না। তারা সব সময় অগণতান্ত্রিক পথে ক্ষমতায় আসতে চায়।”
এর আগে গত ২৭ মে বাংলাদেশের উদ্দেশে ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করলে সেই ব্যক্তি ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার কথা জানানো হয়। ওই ভিসা নীতি যেকোনো বাংলাদেশির ওপর কার্যকরের কথা বলা হলেও বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকারপন্থী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের অন্তর্ভুক্তির কথা উল্লেখ করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। এরপর শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে নতুন ভিসা নীতির প্রয়োগ শুরুর ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এরও আগে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে র্যাব এবং এর সাবেক কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “আজ থেকে যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসা নিষেধাজ্ঞা শুরু করেছে, এতে সরকার চিন্তিত নয়। কারণ, এটি শুধু আওয়ামী লীগের জন্য নয়, সবার জন্য প্রযোজ্য সতর্কবার্তা।”
কৃষিমন্ত্রী বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ভিসা নিষেধাজ্ঞা সরকারি ও বিরোধী দল, সিভিল সোসাইটি সবার জন্য প্রযোজ্য। যারাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করবে তাদের বিরুদ্ধে ভিসার নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে যুক্তরাষ্ট্র কোনো কিছু সমর্থন করবে না।”
তিনি আরও বলেন, “আমি মনে করি এ ভিসা নীতির পরিবর্তন সবার জন্য ক্ষতি। আমাদের অনেক অশুভ শক্তি রয়েছে। অসাংবিধানিক গোষ্ঠী রয়েছে, ১৯৭৫ সালে তারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে। বারবার এ অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতায় এসেছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এ সব ঘটনা ঘটছে। আপনারা দেখছেন পাকিস্তানেও ঘটছে। আমরা সরকার বা আওয়ামী লীগ ভিসা নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়া নিয়ে চিন্তিত না। আমরা আমাদের বিবেক দিয়ে পরিচালিত হচ্ছি। কাজেই এটা নিয়ে আমাদের কোনো ভয় নেই। যুক্তরাষ্ট্র সুনির্দিষ্ট কারো ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। কেউ নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করলে তার ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেবে। সে ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান খুবই সুস্পষ্ট।”