ঢাকা-১৭ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ২৮ হাজার ৮১৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তবে, বিজয়ী প্রার্থীকে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত কোনো প্রকার বিজয় মিছিল করতে নিষেধ করা হয়েছে।
সোমবার (১৭ জুলাই) বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণার সময় এ কথা জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা মনির হোসাইন খান।
মনির হোসাইন খান বলেন, “আজকে (১৭ জুলাই) কোনো বিজয় মিছিল করা যাবে না। আমি আগামীকাল (১৮ জুলাই) চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করব। আবেদনের মাধ্যমে কেউ যদি কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল চায়, তা আমরা দিতে পারব।”
ফলাফল ঘোষণার সময় মনির হোসাইন খান আরও বলেন, “পুলিশ, সহকারী প্রিজাইডিং, প্রিজাইডিং অফিসাররা অনেক সহযোগিতা করেছেন। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। বিজিবি, র্যাব, বিভিন্ন বাহিনী ও বিভিন্ন ম্যাজিস্ট্রেটরা রয়েছেন। তারাও অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। গণমাধ্যম ও প্রার্থীরাও সবসময় আমাকে আপডেট দিয়েছেন। সর্বোপরি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। তাই আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।”
এই আসনের উপনির্বাচনের বেসরকারি ফলাফলে ৫ হাজার ৬০৯ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন একতারা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম।
এছাড়া অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে, লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে সিকদার আনিসুর রহমান ১ হাজার ৩২৮ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীক নিয়ে কাজী মো. রাশিদুল হাসান ৯২৩ ভোট, ঘড়ি প্রতীক নিয়ে মো. আকতার হোসেন ৬৪ ভোট, ট্রাক প্রতীক নিয়ে মো. তারেকুল ইসলাম ভূঞাঁ ৫২ ভোট, ডাব প্রতীক নিয়ে মো. রেজাউল ইসলাম স্বপন ৪৩ ভোট এবং সোনালী আঁশ প্রতীক নিয়ে শেখ হাবিবুর রহমান ২০২ ভোট পেয়েছেন। নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছে ১১ দশমিক ৫১ শতাংশ।
এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ২৫ হাজার ২০৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ৬২৫ জন এবং নারী ভোটার ছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৮০ জন।
এর আগে সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ভোট শুরুর পর থেকে কেন্দ্রগুলো ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। ভোটগ্রহণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের অলস সময় কাটাতে দেখা যায়। ধারণা ছিল, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে। কিন্তু দুপুর গড়ালেও বিভিন্ন কেন্দ্র ছিল অনেকটাই ফাঁকা। এত কম ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও হতাশা ব্যক্ত করেন।
তবে প্রার্থীদের কেউ কেউ জানান, স্বল্প মেয়াদের জন্য এ উপনির্বাচন হওয়ায় ভোটারদের আগ্রহ কম। তাই অনেকে ভোটকেন্দ্রে আসেননি। অন্যদিকে বিএনপি এ উপনির্বাচনে অংশ নেয়নি। ফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সামনে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থী ছিল না।
বিকালে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, ঢাকা-১৭ আসনে ঠিক কত শতাংশ ভোট পড়েছে সে তথ্য আমরা পাইনি। তবে খুবই কম ভোট পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে ১২ থেকে ১৩ শতাংশ হতে পারে, সর্বোচ্চ ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ ভোট পড়তে পারে।
এদিকে বেলা সোয়া ৩টার দিকে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করার সময় হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ভোটকেন্দ্রে ঢোকার আগে হিলো আলম স্কুলের খেলার মাঠে ভক্তদের সঙ্গে কিছু সেলফি তোলেন। এরপর কয়েকজন তার দিকে আসেন এবং বলেন, ‘এটি টিকটক করার জায়গা নয়।’ এরপর তাকে মারধর করতে থাকেন নৌকার ব্যাজধারীরা।
আহত হিরো আলমকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে সাংবাদিকদের ভোট নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেন তিনি। হিরো আলম জানান, এ সরকারের অধীনে তিনি আর কোনো নির্বাচন করবেন না। তিনি বলেন, “ভোটের এরকম পরিবেশ হলে, প্রার্থীদের ওপর হামলা হলে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো দরকার নেই।”
এ হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার রাতে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) জনসংযোগ শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার কে এন রায় নিয়তি।
কে এন রায় নিয়তি বলেন, “বিকালে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্রের বাইরে হিরো আলমের ওপর হামলার পরপর ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাদের গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগের সদস্যরা।”
অপরদিকে, হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ হামলার নিন্দা জানান।
গত ১৫ মে চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) মারা যাওয়ায় ঢাকা-১৭ আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।