পাবনার ছেলে মুরাদ হোসেন। তার বয়স ৪০। তাদের যৌথ পরিবার। এ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। সংসারের দারিদ্র্যতা দূর করে স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় রাজধানীর একটি চায়নিজ রেস্টুরেন্টে ম্যানেজার হিসেবে কাজ নিয়েছিলেন। স্বপ্ন ছিল এক সময় ঈশ্বরদীতে ফিরে নিজ এলাকায় রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করবেন। তবে কয়েকটা গুলি নিমেষেই তার সব আশা চুরমার হয়ে গেছে।
এক মাস আগে রাতে কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন মুরাদ। তারপর থেকেই তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। পরিবারের সদস্যরাও মুরাদের বেঁচে থাকার আশা এক প্রকার ছেড়ে দিয়েছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি বেঁচে থাকলেও আর কোনো দিন স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারবেন না। এ অবস্থায় মুরাদের পরিবারের সবাই চোখে অন্ধকার দেখছেন।
জানা গেছে, মুরাদ এক মাস ধরে অচেতন অবস্থায় রয়েছেন। ঢাকার নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের আইসিইউ থেকে রোববার তাকে পোস্ট অপারেটিভ বেডে স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানেই তার নিবিড় চিকিৎসা চলছে।
হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক রেজাউল করিম জানান, গুলিবিদ্ধ মুরাদের শরীর থেকে দুটি গুলি বের করা হয়েছে, তার স্পাইনালকড অকেজো হয়ে শরীর প্যারালাইজ হয়ে গেছে। সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে তার ফেরার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
বাবা-মা এবং স্ত্রী মহুয়া মার্জিয়া রানী (৩৬), মেয়ে আয়েশা ইসলাম (১৯) ও ছেলে মেহরাব ইসলামকে (১২) নিয়ে সুখের সংসার ছিল মুরাদের। মেয়েটি রাজধানীর মিরপুর আইডিয়াল গার্লস কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে এবং ছেলে গুলশানের একটি মাদ্রাসায় হেফজে পড়ালেখা করছে।
মুরাদের বাবা আমিনুল ইসলাম জানান, ১৮ জুলাই রাতে কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন তার ছেলে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
তিনি জানান, রেস্টুরেন্টে চাকরি করে যা আয় হতো, তা দিয়ে মুরাদের সংসারটা কোনোমতে চলত। জমানো কোনো টাকা ছিল না। এই এক মাসে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুদের সহায়তায় চিকিৎসা চলেছে। ইতিমধ্যে প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখনো প্রতিদিন ২ থেকে ৩ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। ছেলেমেয়ে দুটির পড়ালেখাও এখন বন্ধ।
মুরাদের স্ত্রী মহুয়া বলেন, “আমরা কীভাবে বেঁচে থাকব তার কোনো উপায় দেখছি না।”
মুরাদের বাবা তার সন্তানকে সুস্থ করে তুলতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।