• ঢাকা
  • বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬
হাজারিবাগ থেকে সাভার

ট্যানারি শ্রমিকদের স্বপ্ন ৭ বছরেও অধরা


লোটন আচার্য্য, সাভার
প্রকাশিত: জুন ১২, ২০২৪, ০৫:৪৭ পিএম
ট্যানারি শ্রমিকদের স্বপ্ন  ৭ বছরেও অধরা
সাভারের ট্যানারি পল্লিতে কর্মরত শ্রমিকরা। ছবি: সংবাদ প্রকাশ

হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সাভারে স্থানান্তরিত হয়েছে ৭ বছর আগে। কিন্তু ৭ বছরে সাভারের হরিণধরার বিসিক শিল্পনগরীর অনেক চিত্র পরিবর্তন হলেও, পরিবর্তন হয়নি ট্যানারিতে কর্মরত শ্রমিকদের ভাগ্য। বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ও মজুরি বোর্ডের অনুসারে ট্যানারি শ্রমিকদের বেতনের দাবি থাকলেও ৭ বছরে কোনো স্বপ্নই পূরণ হয়নি তাদের।

বুধবার (১২ জুন) সকালে সাভারের বিসিক চামড়া শিল্প নগরীতে একাধিক শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বললে এমন তথ্য ও ক্ষোভের কথা জানান তারা।

শ্রমিকরা বলেন, ২০১৭ সালে ঢাকার হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সড়িয়ে সাভারের হরিণধরায় স্থানান্তর করা হয়। সে সময় ট্যানারির জন্য স্থান বরাদ্দ করেছে বিসিক। এসময় ট্যানারি শ্রমিকদের বসবাসের জন্য বাসস্থানের দাবি করা হয়। একই সঙ্গে চিকিৎসা সেবার জন্য বিসিকে হাসপাতালের দাবি এবং ট্যানারি শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য বিদ্যালয়ের দাবি জানানো হয়েছিল। এছাড়াও মজুরি বোর্ড অনুসারে শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ট্যানারি মালিকরা বেতন নির্ধারণ করে বলে জানান শ্রমিকরা।

সমতা ট্যানারির মেশিন অপারেটর মো. লিটন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমি ৩৫ বছর ধরে ট্যানারিতে কাজ করছি। বর্তমানে আমার বেতন ১৮ হাজার টাকা। এ বেতন নির্ধারণে কোনো মজুরি বোর্ড মানা হয়নি। শুরুতে একজন ট্যানারি শ্রমিককে ৭ হাজার টাকা বেতন ধরা হয়।” এছাড়া বোনাস ও ওভারটাইমের সুবিধা নেই বলে জানান তিনি।

কামাল হোসেন নামের এক শ্রমিক জানান, সরকার শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু ট্যানারি শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করেনি। মালিক পক্ষ কাজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এবং যাকে যেমন বেতন দিয়ে ট্যানারিতে চাকরি দিতে পারে, এমন নিয়ম চলছে। এছাড়াও কোনো শ্রমিক দুর্ঘটনার শিকার হলেও হাসপাতালে নিতে গিয়ে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। একাধিকবার বিভিন্ন দাবি করলেও মালিক পক্ষ কর্ণপাত করেনি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি।

ট্যানারির ভেতরে কর্মব্যস্ত শ্রমিকরা। ছবি: সংবাদ প্রকাশ

ট্যানারী ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “মালিক পক্ষের দুইটি সংগঠনের সঙ্গে আমরা প্রায় ২২টি সিবিএ চুক্তি করেছি। প্রতি ২ বছর পর পর মালিক পক্ষের সঙ্গে আমাদের এসব চুক্তি হয়। ২০১৭ সালে বিসিক ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর করা হয়েছে। এরপরের বছরই ট্যানারি শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করে মজুরি বোর্ড। সেখানে ৫টি গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে।” তার মধ্যে সর্বনিম্ন বেতন ১৩ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারিত হয়েছিল বলে জানান তিনি।

সংগঠনের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “এখন শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি ঘোষণার সময় এসেছে। আমরা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকার দাবি জানিয়েছি। একই সঙ্গে হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কয়েক দফার দাবি জানানো হয়েছে।”

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কমপ্লায়েন্স। জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি, সার্টিফিকেশনের অভাবে চামড়ার মূল্য না পাওয়ায় ট্যানারিগুলোর অবস্থা খারাপ। এ জন্য আমাদের শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া বিসিক আমাদের পরিপূর্ণ শিল্পনগরী দিতে পারেনি। ট্যানারি আমাদের মালিকদের ১৫৪টি প্লট বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু তারা শ্রমিকদের জন্য কোনো বাসস্থানসহ অন্যান সুযোগ-সুবিধা দেয়নি।”

Link copied!