• ঢাকা
  • বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাজেট ইতিহাস : কোন অর্থমন্ত্রীর বাজেট কেমন ছিল


নূর মামুন
প্রকাশিত: জুন ১, ২০২৪, ০৮:৪১ পিএম
বাজেট ইতিহাস : কোন অর্থমন্ত্রীর বাজেট কেমন ছিল
স্বাধীনতার পর থেকে বাজেটের আকার বাড়ছেই। ছবি: সংগৃহীত

দেশের কোথায় বা কোন খাতে কত আয়-ব্যয় হবে, সেই পরিকল্পনা নিয়ে প্রতি অর্থবছরে বাজেট পাস করা হয়। স্বাধীনতার পর প্রথম বাজেট থেকে শুরু করে এ যাবৎ যত বাজেট হয়েছে দেশে, সব কটিরই আকার বেড়েছে। সবশেষ চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ‘উন্নয়নের দেড় দশক : স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে স্বাধীনতার ৫২ বছরের ব্যবধানে ৯৬৯ গুণ বড় বাজেট প্রস্তাব করেছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এটি ছিল মুস্তফা কামালের পঞ্চম বাজেট উপস্থাপন। জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে কণ্ঠভোটে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়।

এর আগে টানা ১০ বার বাজেট দিয়ে রেকর্ড গড়েন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তার আগে বাংলাদেশে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া টানা ছয়টি বাজেট দেন। তবে আবদুল মুহিত টানা ১০ বাজেট ছাড়াও এরশাদ সরকারের সময় (১৯৮২-৮৩ ও ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছর) দুটি বাজেট দিয়েছিলেন। এ হিসাবে মুহিতের উপস্থাপন করা বাজেটের সংখ্যা ১২টি। এ ছাড়া প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানেরও ১২টি বাজেট দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বাজেটের আকার এবং অর্থমন্ত্রীর তালিকা-

১. ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে ৭৮৬ কোটি টাকা (তাজউদ্দীন আহমদ)

২. ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে ৯৯৫ কোটি টাকা (তাজউদ্দীন আহমদ)

৩. ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরে ১০৮৪ দশমিক ৩৭ কোটি টাকা (তাজউদ্দীন আহমদ)

৪. ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরে ১৫৪৯ দশমিক ১৯ কোটি টাকা (ড. আজিজুর রহমান)

৫. ১৯৭৬-৭৭ অর্থবছরে ১৯৮৯ দশমিক ৮৭ কোটি টাকা (মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান)

৬. ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে ২১৮৪ কোটি টাকা (লে. জেনারেল জিয়াউর রহমান)

৭. ১৯৭৮-৭৯ অর্থবছরে রহমান ২৪৯৯ কোটি টাকা (রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান)

৮. ১৯৭৯-৮০ অর্থবছরে ৩৩১৭ কোটি টাকা (ড. এম এন হুদা)

৯. ১৯৮০-৮১ অর্থবছরে ৪১০৮ কোটি টাকা (এম সাইফুর রহমান)

১০. ১৯৮১-৮২ অর্থবছরে ৪৬৭৭ কোটি টাকা (এম সাইফুর রহমান)

১১. ১৯৮২-৮৩ অর্থবছরে ৪৭৩৮ কোটি টাকা (আবুল মাল আবদুল মুহিত)

১২. ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে ৫৮৯৬ কোটি টাকা (আবুল মাল আবদুল মুহিত)

১৩. ১৯৮৪-৮৫ অর্থবছরে ৬৬৯৯ কোটি টাকা (এম সাইদুজ্জামান)

১৪. ১৯৮৫-৮৬ অর্থবছরে ৭১৩৮ কোটি টাকা (এম সাইদুজ্জামান)

১৫. ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরে ৮৫০৪ কোটি টাকা (এম সাইদুজ্জামান)

১৬. ১৯৮৭-৮৮ অর্থবছরে ৮৫২৭ কোটি টাকা (এম সাইদুজ্জামান)

১৭. ১৯৮৮-৮৯ অর্থবছরে ১০৫৬৫ কোটি টাকা (মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম)

১৮. ১৯৮৯-৯০ ১২৭০৩ কোটি টাকা (ড. ওয়াহিদুল হক)

১৯. ১৯৯০-৯১ অর্থবছরে ১২৯৬০ কোটি টাকা (মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম)

২০. ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে ১৫৫৮৪ কোটি টাকা (এম সাইফুর রহমান)

২১. ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে ১৭৬০৭ কোটি টাকা (এম সাইফুর রহমান)

২২. ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে ১৯০৫০ কোটি টাকা (এম সাইফুর রহমান)

২৩. ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরে ২০৯৪৮ কোটি টাকা (এম সাইফুর রহমান)

২৪. ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে ২৩১৭০ কোটি টাকা (এম সাইফুর রহমান)

২৫. ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে ২৪৬০৩ কোটি টাকা (এসএএমএস কিবরিয়া)

২৬. ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে ২৭৭৮৬ কোটি টাকা (এসএএমএস কিবরিয়া)

২৭. ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে ২৯৫৩৭ কোটি টাকা (এসএএমএস কিবরিয়া)

২৮. ১৯৯৯-০০ অর্থবছরে ৩৪২৫২ কোটি টাকা (এসএএমএস কিবরিয়া)

২৯. ২০০০-০১ অর্থবছরে ৩৮৫২৪ কোটি টাকা (এসএএমএস কিবরিয়া)

৩০. ২০০১-০২ অর্থবছরে ৪২৩০৬ কোটি টাকা (এসএএমএস কিবরিয়া)

৩১. ২০০২-০৩ অর্থবছরে ৪৪৮৫৪ কোটি টাকা (এম সাইফুর রহমান)

৩২. ২০০৩-০৪ অর্থবছরে ৫১৯৮০ কোটি টাকা (এম সাইফুর রহমান)

৩৩. ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ৫৭২৪৮ কোটি টাকা (এম সাইফুর রহমান)

৩৪. ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৬১০৫৮ কোটি টাকা (এম সাইফুর রহমান)

৩৫. ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ৬৯৭৪০ কোটি টাকা (এম সাইফুর রহমান)

৩৬. ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৯৯৯৬২ কোটি টাকা (এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম)

৩৭. ২০০৮-০৯  অর্থবছরে ৯৯৯৬২ কোটি টাকা (এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম)

৩৮. ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১১৩,৮১৫ কোটি টাকা (আবুল মাল আবদুল মুহিত)

৩৯. ২০১০-১১ অর্থবছরে ১৩২,১৭০ কোটি টাকা (আবুল মাল আবদুল মুহিত)

৪০. ২০১১-১২ অর্থবছরে ১৬৫,০০০ কোটি টাকা (আবুল মাল আবদুল মুহিত)

৪১. ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৯১,৭৩৮ কোটি টাকা (আবুল মাল আবদুল মুহিত)

৪২. ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা (আবুল মাল আবদুল মুহিত)

৪৩. ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা

৪৪. ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা

৪৫. ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা (আবুল মাল আবদুল মুহিত)

৪৬. ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪ লাখ ২৭০ কোটি টাকা (আবুল মাল আবদুল মুহিত)

৪৭. ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা (আবুল মাল আবদুল মুহিত)

৪৮. ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা (আ হ ম মুস্তফা কামাল)

৪৯. ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা (আ হ ম মুস্তফা কামাল)

৫০. ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা (আ হ ম মুস্তফা কামাল)

৫১. ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা (আ হ ম মুস্তফা কামাল)

৫২. ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা (আ হ ম মুস্তফা কামাল)

সর্বশেষ বাজেটে ঘাটতি ধরা হয় ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। এতে অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ।

এদিকে, আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। দেশে চলমান রিজার্ভ সংকটের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী কেমন বাজেট পরিকল্পনা করেছেন, তা নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই।

এদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার মূল বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করা হয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) সভায় এ উন্নয়ন বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপি প্রণয়নে গত ১৪ মার্চ নির্দেশনা দেয় পরিকল্পনা কমিশন। সেই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সব বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছ থেকে এডিপির জন্য মোট ২ লাখ ৭৬ হাজার ৪০২ কোটি ৪৬ লাখ টাকার প্রাথমিক চাহিদা পাওয়া যায়। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন এক লাখ ৮৫ হাজার ৩৯১ কোটি ১৯ লাখ টাকা ও প্রকল্প ঋণ-অনুদান ৯১ হাজার ১১ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

পরে অর্থ বিভাগ থেকে পাঠানো নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপির আকার দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণপূর্বক কার্যক্রম বিভাগকে অবহিত করা হয়। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা বা ৬২ দশমিক ২৬ শতাংশ। উন্নয়ন ব্যয় মেটাতে বৈদেশিক ঋণ-অনুদানের টার্গেট এক লাখ কোটি টাকা বা ৩৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সে হিসাবে এডিপিতে এক অর্থবছরের ব্যবধানে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বাড়ছে ১৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

Link copied!