• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নতুন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাচ্ছেন যারা


সফিকুল ইসলাম
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১০, ২০২৪, ০৪:৫৯ পিএম
নতুন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাচ্ছেন যারা
বুধবার সংসদের সরকারি দলের সভাকক্ষে সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিন। ছবি : পিআইডি

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর আরও পাঁচ বছরের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাচ্ছে টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ। বুধবার (১০ জানুয়ারি) জাাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ, স্বতন্ত্র ও জাতীয় পার্টিসহ সব এমপিদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠিত হবে। আবারও টানা চতুর্থ এবং পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন শেখ হাসিনা। মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্য কারা হচ্ছেন, তা নিয়ে নির্বাচনের পর থেকেই আলোচনা চলছে রাজনৈতিক মহলসহ সাধারণের মাঝে। মন্ত্রিসভায় কি চমক থাকছে এবার?  তা নিয়েও রাজনৈতিক বোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের মাঝে কৌতুহলের শেষ নেই।

সূত্রে জানা গেছে, একাদশ নির্বাচনের পর গঠিত বর্তমান মন্ত্রিসভার বেশিরভাগ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীকে বাদ দিয়ে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের মাধ্যমে দেশবাসিকে নতুন চমক দিতে পারেন শেখ হাসিনা। 

পরিবর্তন আসতে পারে অর্থ, কৃষি, স্বরাষ্ট্র, সংস্থাপন, আইন, বাণিজ্য, তথ্য, স্থানীয় সরকার ও জ্বালানির মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে। তবে সবকিছু খোলাসা হবে বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের মধ্যদিয়ে। 

বর্তমান মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীসহ ৪৪ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী রয়েছেন। এর মধ্যে ২৩ জন মন্ত্রী, ১৮ জন প্রতিমন্ত্রী ও ৩ জন উপমন্ত্রী। মনোনয়ন না পাওয়া ৪ জন ও মনোনয়ন পেয়ে পরাজিত হওয়ার মধ্যদিয়ে ৩ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে এমনিতেই মন্ত্রিসভা থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে। 

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিদায় নিয়েছেন টেকনোক্র্যাট দুই মন্ত্রী। তবে বর্তমান মন্ত্রিসভার বাকি ৩৫ জনের মধ্যে আরও বেশ কয়েকজন বৃহস্পতিবার বিদায় নিতে যাচ্ছেন এটা মোটামোটি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, এবারের মন্ত্রিসভা গতবারের চেয়ে আরও মজবুত করতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারণ, এই মন্ত্রিসভাকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। 

তবে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকণ্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে মন্ত্রিসভায় প্রধান থাকেন, সেখানে অন্য মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর ঝড়ঝাপ্টা খুব একটা সামাল দিতে হয় না। বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যরা পতাকাবাহী গাড়িতে বঙ্গবভনে যাবেন। নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী শপথ নেওয়া শেষে বাদ পড়া সদস্যরা গাড়িতে পতাকা ছাড়াই বের হবেন। আর শপথ নেওয়া নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা গাড়িতে পতাকা লাগিয়ে বঙ্গবভন থেকে বের হবেন।

আপাতত স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত ও জাতীয় পার্টি থেকে মন্ত্রিসভায় কাউকে রাখতে চান না প্রধানমন্ত্রী। যারা এবারের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাবেন আজ (বুধবার) সন্ধ্যা বা পরের দিন সকালে তাদের মন্ত্রিপরিষদ সচিব কক্ষ থেকে অবহিত করা হবে। 

এছাড়াও জেলা-উপজেলায় রাজনীতি করেছেন এমন ৬-৭ জন ত্যাগী নেতা নতুন মন্ত্রিসভায় সুযোগ পেতে পারেন। এবারের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে টানা চারবার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকছে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এ দলটি। এর আগে বাংলাদেশে কোনো দল টানা এতবার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পায়নি।

নতুন মন্ত্রিসভায় আলোচনায় যারা 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আগের মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়া কয়েকজন নতুন মন্ত্রিসভায় সুযোগ পেতে যাচ্ছেন। নতুন মন্ত্রিসভায় একেবারেই নতুন মুখ আসতে পারেন আরও একডজন নেতা। দুই ও তিনবার যারা মন্ত্রী- প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, তাদের মধ্য থেকে বেশি বাদ পড়তে পারেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন। নতুন করে মন্ত্রিসভায় যোগ হতে পারেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্যও। মন্ত্রী হতে পারেন এর আগের মন্ত্রিসভায় থাকা দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান, শাজাহান খান ও জাহাঙ্গীর কবির নানক। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিমের নামও আলোচনায় রয়েছে। এ ছাড়া সাবের হোসেন চৌধুরী, র আ ম উবায়দুল মোক্তাদির চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দীন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, নওগাঁ থেকে নির্বাচিত সাবেক সচিব সোমেন্দ্র কুমার চক্রবর্তী নতুন মন্ত্রিসভায় আসতে পারেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। 

বর্তমান মন্ত্রিসভায় অন্তত দুজন প্রতিমন্ত্রী পূর্ণ মন্ত্রী হতে পারেন বলেও জানা গেছে। মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ আসতে পারেন রোমানা আলী টুসি, প্রাণগোপাল দত্ত ও জাকিয়া নূর লিপি এবং জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, ডাক ও টেলিযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবারের মন্ত্রিসভায় না-ও থাকতে পারেন। তবে টেকনোক্র্যাট কোটায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলমের থেকে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

মন্ত্রিসভা নিয়ে যা বললেন ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে। বুধবার (১০ জানুয়ারি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নবনির্বাচিত এমপি হিসেবে শপথগ্রহণ এবং আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, কেবিনেটের এখতিয়ার একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর। তিনিই বলতে পারবেন আকার কেমন হবে। একইসুরে কথা বলেছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী অনেক জ্ঞানী মানুষ। দেশের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ওনার ঠিক করা আছে। এটা তিনি জানেন, কোথায় কাকে কখন নেওয়া দরকার। এটা প্রধানমন্ত্রী নিজেই ঠিক করেন। সারা পৃথিবীতেও এটিই নিয়ম।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের তালিকা পাবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। সে অনুযায়ী নতুন মন্ত্রীদের শপথের জন্য আলাদা আলাদা ফোল্ডার প্রস্তুত করতে হবে। 

মন্ত্রিসভা গঠনে যা আছে সংবিধানে

সংবিধানের ৫৫(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি মন্ত্রিসভা থাকিবে এবং প্রধানমন্ত্রী ও সময়ে সময়ে তিনি যেরূপ স্থির করিবেন, সেইরূপ অন্যান্য মন্ত্রী লইয়া এই মন্ত্রিসভা গঠিত হইবে। আর একই অনুচ্ছেদের ৩ ধারায় বলা হয়েছে, মন্ত্রিসভা যৌথভাবে সংসদের নিকট দায়ী থাকিবেন। আর সংবিধানের ৫৬ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, একজন প্রধানমন্ত্রী থাকিবেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেরূপ নির্ধারণ করিবেন, সেইরূপ অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকিবেন। ধারা দুইয়ে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদিগকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দান করিবেন। এক্ষেত্রে শর্তও দেওয়া হয়েছে। সংবিধান অনুসারে, তাহাদের সংখ্যার অন্যূন নয়-দশমাংশ সংসদ-সদস্যগণের মধ্য হইতে নিযুক্ত হইবেন এবং অনধিক এক-দশমাংশ সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইবার যোগ্য ব্যক্তিগণের মধ্য হইতে মনোনীত হইতে পারিবেন। আর ধারা তিনে বলা হয়েছে, যে সংসদ-সদস্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হইবেন, রাষ্ট্রপতি তাঁহাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করিবেন।

প্রসঙ্গত, কমিশনের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী, নির্বাচনে অংশ নেওয়া ২৮টি দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২২ আসনে জয়লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে। নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১১ এবং ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও কল্যাণ পার্টি একটি করে আসনে জয়লাভ করেছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২টি আসনে জয়লাভ করেছেন।

Link copied!