তেরো বছর বয়সী ফুটফুটে শিশু সামিরা। অন্যান্য সব শিশুর মতো হেসে খেলেই দিন কাটাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ পায়ের টিউমার তাকে নিয়ে আসলো ঢাকার জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ডি ব্লকে। সে এখন ক্যান্সারের রোগী। ডাক্তার ধারণা করছেন তার ফুসফুসও আক্রান্ত। চিকিৎসা চলছে, কিন্তু খরচ তো অনেক। গত আট মাসে প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কৃষক বাবার পক্ষে এতো খরচ চালানো অনেক কষ্টের। তাই তার মা এসেছে ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের সমাজ সেবা কার্যালয়ে।
সামিরার মায়ের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, “আমার মেয়ে ডি ব্লকে ভর্তি আছে এখন। আট মাস ধরে নরসিংদী থেকে হাসপাতালে আসা যাওয়া করতে অনেক খরচ হয়ে গেছে। আমাদের মত গরীবের তো এতো টাকা খরচ করার সামর্থ্য নাই। এই দুঃসময়ে যা পাই তাতেই অনেক সাহায্য হয়। হাসপাতালের এই সমাজ সেবা কার্যালয় থেকে কয়েকদিন আগে দুই হাজার টাকা দিছিল, এখন আবার দিবে তাই আসছি।”
সামিরার মতো এরকম অনেক রোগী আসেন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের সমাজ সেবা কার্যালয়ে। তারা বেশিরভাগই ক্যান্সারের চিকিৎসার খরচ চালাতে চালাতে অসহায় অবস্থায় আছে। তাদের নানাভাবে সহযোগিতা করছে সমাজসেবা কার্যালয়। এরকমই আরেকজন রোগী রোমানিয়া আবেদিন। তিনি ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত। এরমধ্যে একবার কেমো থেরাপি দিয়েছেন, পরের কেমোর জন্য দরখাস্ত করেছে এবং সম্ভাব্য সময় পরেছে আগামী মাসের ১০ তারিখ। যদিও তিনি একজন সরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করছেন, কিন্তু এই কেমো থেরাপির খরচ বহন করা তার পক্ষে সহজ নয়। তিনি এখান থেকে ১০ হাজার টাকার অনুদান পেয়েছেন।
এসময় রোমানিয়া আবেদিনের বোন বলেন, “শুধু কেমোর ঔষধেই ৫৫ হাজার টাকা লাগে, এছাড়াও তো পরীক্ষা নিরীক্ষাসহ আরো খরচ আছে। আমার রোগীর অবস্থা খুব খারাপ। হাসপাতালের সমাজসেবা থেকে যে টাকাটা পেয়েছে সেটাতে খুব উপকার হবে আমাদের। থেরাপির ঔষধ বা অন্যান্য কাজে লাগবে।”
এই সমাজসেবা কার্যালয় থেকে দরিদ্র ও অসহায় ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের কেমোথেরাপির ঔষধ দেওয়া থেকে শুরু করে হাসপাতালের রোগীদের ভাড়া, বেডে ভর্তিকৃত রোগীদের বিছানাভাড়া দেওয়া, রেডিও থেরাপির জন্য আর্থিক সহযোগীতা দেওয়া, বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার খরচ দেওয়া, যাতায়াত ভাড়া দেওয়াসহ লাশ পরিবহনে এম্বুলেন্স ভাড়াও দিয়ে থাকে। এছাড়াও মুমূর্ষ রোগীকে রক্ত প্রদানে ব্যবস্থা করে থাকে সমাজ সেবা বিভাগ।
সমাজসেবা কর্মকর্তা আফরোজা সুলতানা বলেন, “আমাদের ক্যান্সার হাসপাতালের সমাজসেবা কার্যালয় থেকে গরীব ও অসহায় রোগীদের নানারকম সহযোগীতা করে থাকি। এ ক্ষেত্রে হাসপাতালের ডাক্তাররা যখন মনে করেন এই রোগীটার আর্থিক অবস্থা ভাল না, চিকিৎসা চালিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে, তাদেরকে আমাদের কাছে পাঠায়। আবার আমরাও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে রোগীদের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি বুঝে তাদের সহযোগিতা দিয়ে থাকি।”
সর্বোচ্চ কত টাকা সহযোগিতা করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা মাসে একজন রোগীকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত সহযোগিতা করতে পারি। এই পরিমাণ যাতে ৫ হাজার করা যায় সেই চেষ্টা আমরা করছি। আসলে আমাদের সরকারি অনুদানটা খুব কম থাকে, তাই আমাদের আরো কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিদের কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহ করতে হয়। তবে মাসে আমরা এরকম ২০০ থেকে ২৫০ জন রোগীকে সহযোগিতা করে থাকি। যদি এমন কোনো রোগী আসে যে একদমই অসহায় সে ক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করি যেসব প্রতিষ্ঠান অনুদান দেন তাদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিতে। তখন তারা সরাসরি রোগীদের হাতে সহযোগিতা তুলে দেন। তখন মোটামুটি বড় অংকের টাকা পান।
“আর্থিক সহযোগিতা ছাড়াও আমরা রোগীদের কাউন্সিলিং করি। রোগী ক্যান্সার থেকে মুক্ত হয়েছেন কিন্তু তার কোনো কর্মসংস্থান নাই, তাকে আমরা মেয়ে হলে সেলাই মেশিন, ছেলে হলে রিক্সা বা ভ্যান গাড়ি দেওয়া হয়। আবার যাদের হুইল চেয়ার লাগবে কিন্তু কেনার সামর্থ্য নেই, তারাও আমাদের কাছে আসলে চেয়ারের ব্যবস্থা করি,” যুক্ত করলেন আফরোজা সুলতানা।