ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা বিদ্যুৎচুক্তি নিয়ে নতুন পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেছেন, “আদানি গ্রুপের সঙ্গে ২৫ বছরের চুক্তি আদালত থেকে বাতিল না হলে, যে দামে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে তা দ্রুত কমাতে চাইবে বাংলাদেশ।”
রোববার (১ ডিসেম্বর) রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। সোমবার (২ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ডেইলি স্টার অনলাইন।
সাক্ষাৎকালে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, “চুক্তিতে অসংগতি থাকলে আদানির সঙ্গে পুনরায় আলোচনা হবে। শুধুমাত্র দুর্নীতি এবং ঘুষের মতো অনিয়ম হয়ে থাকলে চুক্তি বাতিল হবে। আদালতের নির্দেশে যে তদন্ত চলছে তার ভিত্তিতেই এটি হবে।”
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, “কিছু ইস্যু আছে, যেমন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ভারতে যে করছাড় পাচ্ছে, এর উপকার পাচ্ছে না বাংলাদেশ। বিষয়টি ইতোমধ্যে আদানি গ্রুপকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। চুক্তি পুনর্বিবেচনার একাধিক কারণের মধ্যে এটিও একটি হতে পারে।”
ফাওজুল কবির খান বলেন, “আদানির বিরুদ্ধে মার্কিন আদালতে দুর্নীতির অভিযোগ বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না।”
২০২২-২৩ অর্থবছরে আদানির উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ১৪ টাকা ২ পয়সা দরে আমদানি করে বাংলাদেশ। ভারতের যেকোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে এটাই ছিল সর্বোচ্চ দাম। অন্যদিকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিদ্যুতের গড় দাম ছিল ৮ টাকা ৭৭ পয়সা।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে আদানির বিদ্যুতের দাম ১২ টাকায় নেমে এলেও তা ছিল ভারতের অন্যান্য বেসরকারি উৎপাদনকারীর তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি এবং ভারতীয় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর তুলনায় ৬৩ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশে খুচরা পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৮ টাকা ৯৫ পয়সা। এই খাতে সরকারকে প্রতি বছর ৩২০ বিলিয়ন টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বলে জানান জ্বালানি উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “দাম বেশি হওয়ায় সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আমরা চাই বিদ্যুতের দাম, শুধু আদানি থেকেই নয়, গড় খুচরা দামের নিচে নামুক। আদানি থেকে যে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে তার মূল্য পরিশোধ করতে থাকবে বাংলাদেশ। অর্থপ্রদানে বিলম্বের কারণে সম্প্রতি কোম্পানিটি বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক করে দিয়েছিল।”
জ্বালানি উপদেষ্টা আরও বলেন, “বাংলাদেশের চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা রয়েছে। তবে গ্যাসের ঘাটতি বা অন্যান্য কারণে কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বর্তমানে উৎপাদনে নেই। আদানি যখন সরবরাহ অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছিল, বাংলাদেশের কিছুই হয়নি। আমরা কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীকে আমাদের ব্ল্যাকমেইল করতে দেবো।”
এ ব্যাপারে মন্তব্য চাওয়া হলেও আদানি গ্রুপের দিক থেকে কোনো সাড়া পায়নি রয়টার্স। তবে আদানি পাওয়ার লিমিটেড তার সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে বলেছে যে, ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাংলাদেশকে নিরবচ্ছিন্ন, নির্ভরযোগ্য এবং সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে, যাতে ভোক্তাদের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।
