• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
সংরক্ষিত নারী আসন

আওয়ামী লীগে আসবে নতুন মুখ, বাদ পড়তে পারেন পুরানোরা


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২৪, ০১:১৫ পিএম
আওয়ামী লীগে আসবে নতুন মুখ, বাদ পড়তে পারেন পুরানোরা
নতুন মুখই বেশি আসতে পারে সংরক্ষিত নারী আসনে। ছবি : সংগৃহীত

তফসিল ঘোষণা হয়নি এখনো। তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে জোর লবিং করছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। দলের সাধারণ সম্পাদকসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের অফিস থেকে শুরু করে বাসায়ও যাচ্ছেন তারা। ফুলের তোড়া নিয়ে নিজেদের প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন। কারা দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন, এ নিয়ে চলছে নানান জল্পনাকল্পনা। তবে নতুন মুখই বেশি আসতে পারে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, তাদের দলের হয়ে ৩৫-৪০ জন নারী নতুন করে সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হতে পারেন।  

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শিডিউল ঘোষণার পর দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।

দলীয় সূত্রমতে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে বসতে তৎপর হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পদধারী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারীরা। এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী আসনে স্বতন্ত্র জোটের মনোনয়ন পেতেও জোর তদবিরে নেমেছেন আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের পদধারী, ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী, আইনজীবী, উদ্যোক্তা, উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা, শিক্ষক, অভিনেত্রীসহ বিভিন্ন মাধ্যমের তারকারা। তফসিল ঘোষণা না হলেও ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পেতে নানা কায়দায় সক্রিয় রয়েছেন তারা।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম গণমাধ্যমে বলেন, আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে যারা কাজ করেছে, দুর্দিনের কর্মী, এককথায় যারা নিপীড়িত-নির্যাতিত, যারা পারিবারিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে; সংরক্ষিত আসনের জন্য তাদের মনোনীত করা হবে। এ ছাড়া যারা নারী অধিকার ও নারী জাগরণে অবদান রাখতে পারে, সেটিও বিবেচনায় নেওয়া হবে। আবার বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত, সেলিব্রিটি, পেশাজীবী—সবকিছুর সমন্বয়েই সংরক্ষিত আসনে দলীয় প্রার্থী দেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, নির্বাচনে ১১ আসনে বিজয়ী জাতীয় পার্টির (জাপা) দুটি সংরক্ষিত আসনে দলের দুই কো-চেয়ারম্যান শেরীফা কাদের ও সালমা ইসলামের মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত। এর বাইরে ৪৮ জনের মনোনয়ন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নির্ভর করছে। এ অবস্থায়, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপিদের পাশাপাশি অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টায় আছেন। কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পেতে মরিয়া হয়ে উঠছেন। কেউ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাচ্ছেন, আবার কেউ আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এসে নেত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারের আর্জি জানাচ্ছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত ৫০ নারী আসনের মধ্যে ৪৩টি পেয়েছিল আওয়ামী লীগ। এসব আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য ১ হাজার ৫১০ জন আবেদন করেছিলেন। এবারও পরিস্থিতি একই রকম হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ, মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেত্রীরাও সংরক্ষিত আসনে বসতে চাচ্ছেন।

দলীয় সূত্রমতে, একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত এমপিদের মধ্য থেকে ১০ থেকে ১২ জনকে স্বপদে বহাল রাখতে পারে আওয়ামী লীগ। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে অধিকাংশ সংরক্ষিত আসনেই নতুনরা স্থান পেতে পারেন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা আলোচনায় আছেন। কয়েক দফা বিভিন্ন উপনির্বাচনে মনোনয়ন ফরম তুলেও দলের দৃষ্টিতে আসতে পারেননি তিনি। সবশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও মনোনয়ন ফরম তুলেছিলেন তিনি। তবে মনোনয়ন জোটেনি। আলোচনা আছে, সংরক্ষিত আসনে বসতে পারেন এই চিকিৎসকের।

লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে ফরিদুন্নাহার লাইলী, গাইবান্ধা-১ আসনে আফরুজা বারী এবং গাইবান্ধা-২ আসনের মাহবুব আরা গিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিকিট পেয়েছিলেন। পরে দলের পক্ষ থেকে শরিকদের আসন ছেড়ে দেওয়া হলে পিছপা হতে হয় তাদের। সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনে তারা তিনজনই এগিয়েই রয়েছেন।

এ ছাড়া আলোচনায় রয়েছেন দলের অর্থ ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান, শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক বেগম শামসুন নাহার চাপা, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মারুফা আক্তার পপি, পারভীন জামান কল্পনা ও তারানা হালিম।

আলোচনায় থাকলেও যুব মহিলা লীগের সাবেক সভাপতি নাজমা আক্তার, একই কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অপু উকিলের সম্ভাবনা ক্ষীণ।

আরও আলোচনা রয়েছেন— যুব মহিলা লীগের সভাপতি আলেয়া সারোয়ার ডেইজী, নাটোর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল কুদ্দুসের মেয়ে যুব মহিলা লীগের সাবেক সহসভাপতি কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি, মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান শিলা, আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, সাবেক সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য আসমা জেরিন ঝুমু, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জাকিয়া সুলতানা শেফালী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদা খানম সাকী ও আসমা আক্তার।

এ ছাড়া ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, সুবর্ণা মুস্তাফা, অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া সরকার ঝর্না, মানবাধিকারকর্মী আরমা দত্ত, গোপালগঞ্জের নার্গিস রহমান ও খাগড়াছড়ির বাসন্তী চাকমার নাম আলোচনায় রয়েছে। এর মধ্যে মানবাধিকারকর্মী আরমা দত্ত একাদশ সংসদে সংরক্ষিত আসনের সদস্য। পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার আলোচনা রয়েছে তার নামও।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এই মানবাধিকারকর্মী বলেন, “আমি তৃণমূল থেকে কাজ করে এসেছি। এখনো সেটাই করছি। আমি আমার শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাব।”

শহীদ পরিবারের দুই সদস্য সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন। তারা হলেন শহীদ আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ এবং শহিদুল্লা কায়সারের মেয়ে শমী কায়সার।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনও এবারের সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য হওয়ার আলোচনায় রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিনোদনজগৎ থেকেও অনেকে এবারের সংসদে বসতে পারেন। এর মধ্যে আলোচনায় আছেন অভিনেত্রী লাকী ইনাম, রোকেয়া প্রাচী, তারিন জাহান, নুসরাত ফারিয়া, অরুণা বিশ্বাস, তানভীন সুইটি, অপু বিশ্বাস ও নিপুণ আক্তার। বিনোদনজগৎ, লেখক ও শিল্পীদের মধ্যে থেকে অন্তত দুজনকে স্থান দেওয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে লাকী ইনামসহ কয়েকজনের নাম আলোচনায় আছে আওয়ামী লীগে।

১৪ দলের শরিকদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও জাতীয় পার্টি (জেপি)—এই তিন দল সমঝোতার মাধ্যমে ছয়টি আসন ভাগে পেয়ে মাত্র দুজন জয়ী হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, শরিকেরা নিজেদের দুই আসন দিয়ে সংরক্ষিত আসন ভাগে পাবে না। শরিকদের মধ্য থেকে তিন-চারজনকে আওয়ামী লীগের কোটায় সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য করা হতে পারে।

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া একবার টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হলেও তিনি কখনো সংসদ সদস্য হতে পারেননি। এমনকি তাকে আসন সমঝোতার মাধ্যমে ছাড়ও দেয়নি আওয়ামী লীগ। এবার তার স্ত্রীকে সংরক্ষিত সংসদ সদস্য করার সম্ভাবনা রয়েছে।

জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর স্ত্রী আফরোজা হক গত সংসদের শেষ দিকে সদস্য হয়েছিলেন। এবার হাসানুল হক ইনু নিজে ভোটে হেরে গেছেন। আবার দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার এবার সমঝোতার আসন ভাগে পাননি। তাকেও আওয়ামী লীগ থেকে সংরক্ষিত আসনে সদস্য করার আশ্বাস ছিল। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, এই দুজন বা তাঁদের মধ্য থেকে একজনকে সদস্য করা হতে পারে।

জেপির আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ভোটে হেরে গেছেন। তার স্ত্রী বা পরিবারের কাউকে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য করার বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন জয়ী হয়েছেন। তার স্ত্রী লুৎফুন নেসা খান গত সংসদে সংরক্ষিত সদস্য ছিলেন। এবার তাকে করা হবে নাকি অন্য কাউকে সুযোগ দেওয়া হবে,এটি এখনো স্পষ্ট নয়।

ইসি সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলের সরকারি গেজেট প্রকাশের পর ৯০ দিনের মধ্যে সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। গত ৯ জানুয়ারি বিজয়ীদের গেজেট প্রকাশ হওয়ায় আগামী ৮ এপ্রিলের মধ্যে এ নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।

আইন অনুযায়ী, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা জোট গঠন করে নারী এমপি নির্বাচিত করতে পারবেন। ফলে বিরোধী দলের স্বীকৃতি পাওয়ার পাশাপাশি সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন নিয়ে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের জোটবদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এবার প্রথম রেকর্ডসংখ্যক ৬২ স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে ৬০ জন মিলে ১০ সংরক্ষিত আসনের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারবেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২২৩টি আসনে, জাতীয় পার্টি ১১টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, কল্যাণ পার্টি ১টি করে আসনে বিজয়ী হয়। একই সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হওয়া ৬২ জনের মধ্যে তিনজন ছাড়া সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন।

বর্তমান জাতীয় সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত মহিলা সদস্যের আসন রয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলো প্রতি ছয়জন নির্বাচিত সংসদ সদস্যের বিপরীতে একজন মহিলা সদস্য পাবেন। সেই হিসাবে আওয়ামী লীগ পাচ্ছে ৩৭টি আসন। স্বতন্ত্ররা জোটবদ্ধ হলে পাবেন ১০টা। জাতীয় পার্টি ২টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, কল্যাণ পার্টি যৌথভাবে এলে ১টা পাবে। স্বতন্ত্ররা একক জোটবদ্ধ না হয়ে ছয়জন করে আবেদন করলে ১টি করে আসন পাবেন।

Link copied!