ডিমের নতুন দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বুধবার (১৬ অক্টোবর) থেকে নতুন দাম সারা দেশে কার্যকর হবে।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে ডিম উৎপাদক এবং সরবরাহকারীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ তথ্য জানিয়েছেন ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান।
আলীম আখতার খান বলেন, “বুধবার (১৬ অক্টোবর) থেকে উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা ১ পয়সা। খুচরায় ১১ টাকা ৮৭ পয়সায় ডিম বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভোক্তাপর্যায়ে প্রতি ডজন কিনতে খরচ হবে ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা।”
সভায় উপস্থিত কয়েকজন আড়তদার ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যেটি বাস্তবায়ন করতে পারলে ভোক্তা পর্যায়ে সাশ্রয়ী মূল্যে ডিম বিক্রি সম্ভব।
শাকসবজি, মাছসহ ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ায় ডিমের বাড়তি চাহিদা তৈরি হওয়া ও দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বন্যায় উৎপাদন কমে যাওয়ার ফলে ডিমের সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে। যা সামাল দিতে সরকার সাড়ে ৪ কোটি পিস ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। তবে সেই ডিম এখনো দেশে এসে পৌঁছায়নি।
ব্যবসায়ীদের দাবি, অভিযানের নামে তাদের যেন হয়রানির শিকার হতে না হয়। কারণ, উৎপাদন পর্যায় থেকে বেশি দামে কিনলে আড়তদার কখনো কম মূল্যে বিক্রি করতে পারবেন না। সেই সঙ্গে সরকার যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, তাও বাস্তবসম্মত নয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, এ অবস্থায় ভোক্তা অধিদপ্তর ‘আপাতত’ সরকার নির্ধারিত মূল্যে ডিম বিক্রি নিয়ে ব্যবসায়ীদের চাপ প্রয়োগ করবে না বলে সভায় জানিয়েছে। একইসঙ্গে করপোরেট কোম্পানিগুলো ঢাকায় যাতে ডিমের সরবরাহ বাড়ায় সে বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছে।
ডিম উৎপাদনকারীরা জানান, সরকার চাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের বাদ দিয়ে কীভাবে সরাসরি ঢাকায় ডিমের সরবরাহ করা যায়। এজন্য বড় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ডিম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তেজগাঁওয়ের ডিমের আড়ত থেকে প্রতিদিন ১৪-১৫ লাখ পিস ডিম সরবরাহ করা হয়। কিন্তু রোববার (১৩ অক্টোবর) ও সোমবার (১৪ অক্টোবর) এ আড়তে ডিমের কোনো ট্রাক প্রবেশ করেনি। সরবরাহের ঘাটতির কারণে কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটসহ কিছু বাজারে ডিমের সংকট তৈরি হয়েছে। সেইসঙ্গে এক ডজন ডিম ১৬৫-১৭০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৯০ টাকায়।
এদিকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
মঙ্গলবার খাদ্য ভবনের মূলগেটের সামনে ‘কৃষি পণ্য ওএমএস কর্মসূচি ২০২৪-এর উদ্বোধন’ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
এসময় বাজারে যারা সিন্ডিকেট করছে, তাদের চিহ্নিত করতে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, “কারা সিন্ডিকেট করছে, কারা চাঁদাবাজি করছে তাদের সামনে নিয়ে আসুন। তাদের খুঁজে বের করতে এবং ধরতে আপনারা (সাংবাদিক) সহযোগিতা করুন।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সরকার। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে।”
সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ কিনা জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “প্রাকৃতিক দুর্যোগ সরকারের ব্যর্থতা হয় কীভাবে? এতে কারও হাত নেই। মূলত, দুর্যোগের কারণেই দাম বাড়ছে।”
এ ছাড়া ডিমের নির্ধারিত দাম বাস্তবায়ন করতে বাজারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সে কারণে তেজগাঁও আড়তের ব্যবসায়ীরা ডিম বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন।
অভিযানে ডিমের দাম তেমন একটা কমেনি, বরং কিছু কিছু পাইকারি বাজারে ডিম বিক্রি বন্ধ অথবা কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এতে সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে।