বিনম্র শ্রদ্ধা, শোক ও ভালোবাসায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করেছে সমগ্র জাতি।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) রাজধানীসহ সারা দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালিত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার নেপথ্যে ষড়যন্ত্রকারী ও কুশীলবদের ধরে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য গণতদন্ত কমিশন গঠন করার দাবি জানান বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা লোকজন।
দেশজুড়ে নানা কর্মসূচিতে ছিল শোকের আবহ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ এবং ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার দৃঢ় অঙ্গীকার ছিল মানুষের কণ্ঠে।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে জাতির পিতাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
সকালে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এসময় বিউগলে করুন সুর বেজে ওঠে। অনুষ্ঠানে সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে।
পরে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এরপর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় উপস্থিত ছিলেন, দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন, বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, শাজাহান খান ও ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুবউল আলম হানিফ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ও এস এম কামাল হোসেন, প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
এরপর শেখ হাসিনা বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রওনা হন। সেখানে তিনি তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ত্যাগ করার পর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরও শ্রদ্ধা জানায়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, তাঁতী লীগ, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস), বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, শিশু একাডেমি, বাংলাদেশ বেতার, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, শেখ রাসেল শিশু সংসদ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ বিভিন্ন দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সর্বস্তরের হাজারো মানুষ।
এছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শোক দিবস উপলক্ষে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এদিকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতার ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং পরে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেন করেন। এ সময় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানী ছাড়াও সারা দেশে এবং দেশের বাইরে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলো বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদনসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শোক দিবস পালন করেছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমন্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল।
পৃথিবীর এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ ও মেয়ে বেবি, সুকান্তবাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
-বাসস