ভারতের কলকাতায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে খুন হয়েছেন বাংলাদেশের ঝিনাইদহের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। এই নৃশংস খুনের ঘটনার তদন্তে উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। এ হত্যাকাণ্ডে প্রথম থেকেই আজীমের মোবাইলের শেষ টাওয়ার ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছিল।
পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিনের এক খবরে বলা হয়, শেষবার আনারের ফোনের লোকেশন ছিল উত্তর প্রদেশ। খুনের পর সবাইকে বিভ্রান্ত করতেই তার মোবাইলটি উত্তর প্রদেশে নিয়ে যাওয়া হয় বলে ধারণা করছে পুলিশ। এর সঙ্গে এবার প্রকাশ্যে এসেছে আজীমের শেষ হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ।
গত ১২ মে কলকাতায় এসেছিলেন আনোয়ারুল আজীম। উঠেছিলেন বরানগরে পুরোনো বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে। ‘বিশেষ কাজে দিল্লি পৌঁছলাম। আমাকে তোমাদের ফোন করার দরকার নেই। আমিই ফোন করে নেব।’ গোপাল বিশ্বাস, নিজের মেয়ে ও ব্যক্তিগত সহকারী একসঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে এই মেসেজ পাঠিয়েছিলেন আনার। আর এই মেসেজ ও মোবাইলের শেষ টাওয়ার ঘিরেই সৃষ্টি হয়েছে রহস্য।
আততায়ীদের মধ্যে একজন আনারের খুনের পর সবাইকে বিভ্রান্ত করতে তার মোবাইলটি উত্তর প্রদেশে নিয়ে যান বলে সন্দেহ করছে পুলিশ। খুনের পর খুনি ওই সংসদ সদস্যের মোবাইল থেকেই হোয়াটসঅ্যাপ করেছিল বলেও ধারণা করছে তারা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ মে বরানগরে বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় আনার বলেছিলেন, তিনি ওইদিনই বরানগরে ফিরে আসবেন। কিন্তু সেদিনই গোপালকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে তিনি জানান, বিশেষ কাজে দিল্লি চলে যাচ্ছেন। তিনি দিল্লি পৌঁছে ফোন করবেন। তাকে ফোন করার প্রয়োজন নেই।
এর দুদিন পর ১৫ মে সকাল ১১টা ২১ মিনিট নাগাদ হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ করে আনোয়ারুল জানান, তিনি দিল্লি পৌঁছে গিয়েছেন। তার সঙ্গে কয়েকজন ভিআইপিও রয়েছেন। তাই তাঁকে ফোন করার প্রয়োজন নেই। বন্ধু গোপালের সঙ্গে ওই একই মেসেজ তিনি বাংলাদেশে তাঁর বাড়িতে ও ব্যক্তিগত সহকারীকে পাঠান। পুলিশ তদন্ত করে জেনেছে, উত্তর প্রদেশের মুজফফরপুরে মোবাইলের শেষ টাওয়ার ছিল। মাঝে মাঝে মোবাইল খোলা হচ্ছিল। তবে বেশির ভাগ সময়ের জন্যই বন্ধ করে রাখা হয়েছিল ফোনটি।
জানা যায়, ১৬ মে সকালে আনোয়ারুলের নম্বর থেকে একটি ফোন আসে তার ব্যক্তিগত সহকারীর নম্বরে। আবার অন্য ফোনটি আসে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মোবাইলে। কিন্তু এমন সময় ফোন করা হয়, দুইজনের কেউই তা ধরতে পারেননি। এরপর যখন আনারের ফোনে তার পিএস ফোন করেন তখন আর তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি। তখনই পরিবারের লোকেদের মনে হয়েছিল যে, কেউ তাঁকে ব্ল্যাকমেইল করেছে।
প্রসঙ্গত, এমপি আনোয়ারুল আজীম গত ১২ মে ভারতের কলকাতায় গিয়ে তার ২৫ বছরের পারিবারিক সম্পর্কের বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাসায় ওঠেন সন্ধ্যা ৭টার দিকে। পরদিন ১৩ মে বেলা ২টার দিকে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা বলে গোপালের বাসা থেকে বের হন। সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার কথা বলে যান।
তবে সেদিন থেকে বাসায় না ফেরায় ১৮ মে কলকাতার বরাহনগর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন গোপাল বিশ্বাস। এরপর ২২ মে এমপি আনোয়ারুল আজীম ভারতে খুন হয়েছেন বলে খবর প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশিরাই হত্যা করেছে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।