• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
রোমহর্ষক বর্ণনা

পরকীয়ার কারণে মাকে হত্যা করেন এমপিকন্যা


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুলাই ২, ২০২৪, ০৮:২০ পিএম
পরকীয়ার কারণে মাকে হত্যা করেন এমপিকন্যা
ভুক্তভোগী সেলিনা খান মজলিশ, গ্রেপ্তার সুবল কুমার রায় ও শামীমা খান মজলিশ ওরফে পপি। ছবি : সংগৃহীত

সাভারের প্রয়াত সংসদ সদস্য (এমপি) ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত সামসুদ্দোহা খান মজলিশের স্ত্রী সেলিনা খান মজলিশ হত্যা মামলার রহস্য ১৩ বছর পর উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পিবিআই জানায়, মেয়ের প্রেমিকের হাতেই ‘খুন’ হয়েছিলেন সেলিমা খান।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে এ তথ্য জানান পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার।

গ্রেপ্তাররা হলেন, প্রয়াত এমপির মেয়ে শামীমা খান মজলিশ পপি (৫৭), তার ‘প্রেমিক’ ইলেকট্রিক মিস্ত্রী সুবল কুমার রায়ক (৫০) এবং এমপির বাসার গৃহকর্মী আরতি সরকার (৫৮)।

বনজ কুমার মজুমদার জানান, হত্যাকারী সুবলের সঙ্গে মেয়ে শামীমার প্রেমের সম্পর্কে বাধা দেওয়ায় খুন হন সেলিনা খান মজলিস। হত্যার পর আত্মহত্যা হিসেবে প্রচারের চেষ্টা করেছিলেন আসামিরা।  

পিবিআই প্রধান বলেন, “মা ও মেয়ের সঙ্গে পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে ঝগড়াবিবাদও প্রায় সময় লেগে থাকত। এ ঘটনায় জড়িত বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।”

বনজ কুমার মজুমদার বলেন, “আমরা খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি যে, ওই বাসায় কারা কারা আসতেন। জানতে পারি একজন ইলেকট্রিশিয়ান মাঝে মাঝে ওই বাসায় আসতেন। কিন্তু বহুদিন ধরে তার ওই বাসায় আসা-যাওয়া নেই। জানতে পারি, তিনি বিগত ৩০ বছর ধরে সাভারে ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করছেন। সেই সঙ্গে পাশেই তার একটি বড় মুদির দোকানও আছে।”

পিবিআই প্রধান বলেন, “আমরা তদন্তকালে যেসব তথ্য জানতে পারি, তার মধ্যে বাসার সুইচ বোর্ডটি ভাঙা এবং সেখান থেকে দুটি তার বের করে রাখার একটা বিষয় উঠে এসেছিল। এরপর আমরা আসামি ইলেকট্রিশিয়ান সুবল কুমার রায়কে (৫০) নিয়ে আসি। সাবেক সংসদ সদস্য সামসুদ্দোহা খান মজলিশ তাকে পছন্দ করতেন, তাই আসামি সুবল কুমার রায় মাঝে-মধ্যে সেখানে যাতায়াত করতেন। বাড়ির ইলেকট্রিকের কাজও করে দিতেন। ১৯৯৮ সাল থেকে সুবল কুমার রায় খান মজলিশের বাড়িতে যাতায়াত করতেন।”

বনজ কুমার মজুমদার বলেন, “আসামি সুবল কুমার রায় গ্রেপ্তারের পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, ভুক্তভোগী সেলিমা খান মজলিশের (৬৩) বড় মেয়ে শামীমা খান মজলিশ তার স্বামীকে নিয়ে নিচতলায় বসবাস করতেন। সেখানে তিনি নিয়মিত যাতায়াতের একপর্যায়ে আসামি শামীমা খান মজলিশের স্বামীর সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে ২০০১ সালে আসামি সুবল কুমার রায় এবং শামীমা খান পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন।”

পিবিআই প্রধান বলেন, “বিষয়টি ২০০৫ সালে জানাজানি হলে সুবল কুমার রায়কে মারধর এবং অপমান করা হলে তিনি বাসা থেকে চলে যান। তাকে আর ওই বাসায় যেতে নিষেধ করা হয়। ২০০৮ সালে সুবল কুমার রায় বিয়ে করেন। ২০১১ সাল থেকে তিনি আবার সেই বাসায় যাতায়াত শুরু করেন।”

বনজ কুমার মজুমদার বলেন, “যেদিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে, সেদিন ফজরের নামাজের সময় ভুক্তভোগী সেলিমা খান মজলিশ ছাদে উঠেছিলেন এবং সেখান থেকে দেখতে পান সুবল কুমার রায় চুপিচুপি তার বাড়ির দিকে আসছেন। সুবলকে দেখে তিনি চিৎকার করতে করতে নিচে নামছিলেন। তখন আসামি সুবল এবং শামীমা ভুক্তভোগীর চিৎকার থামাতে ওপরে যান।”

পিবিআই প্রধান বলেন, “মাকে থামানোর জন্য মেয়ে শামীমা খান মজলিশ তাকে জাপটে ধরেন এবং পাশে থাকা একটি ফল কাটার চাকু দিয়ে গলার দুই পাশে তিনটি পোচ দেন। এরপর যখন তারা দেখেন তার মা মারা যাননি, জীবিত আছে। তখন আসামি সুবল ইলেকট্রিক বোর্ড ভেঙে সেখান থেকে দুটি তার বের করে ভুক্তভোগীর মাথায় ইলেকট্রিক শক দেন এবং মৃত্যু নিশ্চিত করেন।”

বনজ কুমার মজুমদার আরও বলেন, “জবানবন্দি থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের ১৪ জুন সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। বাসার ডাইনিং রুমে ভুক্তভোগীর গলার দুই পাশে ফল কাটার ছুরি দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত অবস্থায় ভুক্তভোগীকে তার প্রতিবন্ধী ছেলে সেতুর কক্ষে নেওয়া হয়। সেখানে খাটের চাদরের ওপরে একটি পুরাতন পত্রিকা বিছিয়ে ভুক্তভোগীর মাথার কাছে দুটি বালিশ দিয়ে চাপা দিয়ে এবং ঘাড়ের নিচে তোষক দিয়ে শুইয়ে রেখে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন আসামিরা।”

Link copied!