• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি চাইলেন মুসল্লিরা


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৫, ২০২৪, ০৪:২৯ পিএম
কেঁদে কেঁদে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি চাইলেন মুসল্লিরা
তীব্র গরমে বৃষ্টির জন্য খোলা আকাশের নিচে নামাজ আদায় করেন মুসুল্লিরা। ছবি : প্রতিনিধি

বৈশাখ মাসের শুরু থেকে সারা দেশে বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। প্রচণ্ড গরমের কারণে ইতোমধ্যে অনেকে অসুস্থ্য হয়ে মারা গেছেন। কয়েকবার হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রশাসনের উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

একই সঙ্গে তীব্র এই তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি ও বৃষ্টির জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় ইসতিসকার নামাজ আদায় করে বিশেষ মোনজাত করছেন মুসল্লিরা। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

টাঙ্গাইল 

তীব্র তাপদাহ থেকে মুক্তির আশায় টাঙ্গাইলে ইসতিসকার নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। নামাজ শেষে বৃষ্টি জন্য বিশেষ মোনাজাত করেন তারা।

বহস্পতিবার সকাল ১০টায় টাঙ্গাইল পৌর শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে জেলা ইমাম ও মুয়াজ্জিন পরিষদের উদ্যোগে এই নামাজের আয়োজন করা হয়। নামাজ শেষে সবাই মহান আল্লাহ পাকের কাছে ক্ষমা চেয়ে গরম থেকে মুক্তি, ফসল রক্ষা ও বৃষ্টির জন্য রহমত কামনা করে দোয়া করেন। এতে রাজনৈতিক নেতা, মাদ্রাসাছাত্র ও শিক্ষকসহ সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, নির্ধারিত সময়ের আগেই মাঠে জড়ো হতে থাকেন মুসল্লিরা। এরপর সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে খোলা আকাশের নিচে ইসতিসকার নামাজ আদায় করা হয়। কেউ জায়নামাজে, কেউ আবার তপ্ত গরম বালুর ওপরে নামাজ আদায় করেন। তীব্র গরম উপেক্ষা করে নামাজে অংশ নেন পাঁচ শতাধিক মুসল্লি।

মুসল্লি কাদের মিয়া জানান, টানা কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রখর রোদের কারণে জীবিকা নির্বাহের জন্য বাইরে বের হতে পারছেন না শ্রমজীবী মানুষ। বৃষ্টি না হওয়ায় ফসল নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ কারণে বৃষ্টি চেয়ে আল্লাহর দরবারে দুই রাকাত নামাজ আদায় ও বিশেষ দোয়া করা হয়।

নামাজে অংশ নেওয়া বৃদ্ধ খালেক মিয়া বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে অনাবৃষ্টির কারণে মানুষ পশুপাখি গাছপালাসহ সবাই খুব কষ্টে আছে। এজন্য বৃষ্টির আশায় নামাজ আদায় করতে আসছি। সৃষ্টিকর্তা চাইলে সবকিছুই সম্ভব। আমরা মানব জাতি যতই কঠিন হইনা কেন? তিনি মহান, তার মহানুভবতায় আমরা এ সংকট থেকে পরিত্রাণ পাব ইনশাআল্লাহ।”

নামাজে ইমামতি করেন শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের খতিব ও জেলা ইমাম ও মুয়াজ্জিন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, “অনাবৃষ্টির কারণে মানুষ হাহাকার করছে। মহান আল্লাহ কোনো কারণে আমাদের ওপরে নারাজ হয়েছেন। এ কারণে বৃষ্টিবর্ষণ বন্ধ রেখেছেন। আজকে মহান আল্লাহর কাছে বৃষ্টি বর্ষণের জন্য মুসল্লিদের নিয়ে নামাজ আদায় করেছি। নামাজ শেষে অনাবৃষ্টি ও গরম থেকে মুক্তির জন্য মহান আল্লাহর রহমত কামনা করে মোনাজাত করেছি।”

তীব্র গরমে বৃষ্টির জন্য খোলা আকাশের নিচে নামাজ আদায় করেন মুসুল্লিরা। ছবি : প্রতিনিধি

ফরিদপুর

তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি ও বৃষ্টির জন্য শহরের চাঁদমারি ঈদগাহ ময়দানে ইসতিসকার নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। নামাজে ইমামতি করেন জামেয়া আরাবিয়া সামসুল উলুম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুফতি কামরুজ্জামান।

জেলা কওমি ওলামা পরিষদ ও ইমাম কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এই নামাজের আয়োজন করা হয়। শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লা থেকে নানা বয়সী মুসুল্লিরা নামাজে শরিক হন।

নামাজ আদায়ের আগে সুন্নত অনুযায়ী সমবেত মুসুল্লিরা একনিষ্ঠ চিত্তে মহান আল্লাহর কাছে তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় করা সকল গুনাহ থেকে তওবা করেন। এরপর মোনাজাত করা হয়।

এছাড়া জেলার বোয়ালমারী উপজেলার বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায় করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সূর্যোদয়ের পরে বাইতুল হামদ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে এ নামাজ আদায় করা হয়। এসময় গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহ, খরা ও অনাবৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে মহান আল্লাহর রহমত লাভের আশায় বিশেষ দোয়া করা হয়।

তীব্র গরমে বৃষ্টির জন্য খোলা আকাশের নিচে নামাজ আদায় করেন মুসুল্লিরা। ছবি : প্রতিনিধি

জামালপুর 

তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি ও বৃষ্টির জন্য জেলার সরিষাবাড়ি, দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ ও জামালপুর সদরের বিভিন্ন স্থানে সালাতুল ইসতিসকার নামাজ আদায় করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সরিষাবাড়ি পৌর এলাকার মহিলা কলেজ সংলগ্ন বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ ঈদগাহ ময়দানে নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।

নামাজ শেষে তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি ও বৃষ্টি প্রার্থনায় বিশেষ দোয়া করা হয়। এ সময় বৃষ্টির জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েন নামাজে মুসল্লিরা।

নামাজে অংশ নেওয়া আরিফুল হক বলেন, “তাপপ্রবাহ থেকে পরিত্রাণ পেতে মহান আল্লাহর কাছে প্রশান্তির বৃষ্টি প্রার্থনা করে আমরা এই নামাজ আদায় করেছি।”

মোনাজাত পরিচালনা করেন বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদের খতিব মাওলানা হাসান উজ্জামান। তিনি বলেন, “মানুষ যখন পাপ কাজ করতে করতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে যায় তখনি আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি চলে আসে। মানুষ পশুপাখি অনাবৃষ্টি ও অতি খরায় ভুগছে। এ অবস্থা থেকে রক্ষা ও বৃষ্টি প্রার্থনায় মহান আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে আমরা এ বিশেষ নামাজ আদায় করলাম।”

তীব্র গরমে বৃষ্টির জন্য খোলা আকাশের নিচে নামাজ আদায় করেন মুসুল্লিরা। ছবি : প্রতিনিধি

ভোলা

তীব্র তাপদাহ থেকে রক্ষা পেতে বৃষ্টির জন্য ভোলায় ইসতিসকার নামাজ আদায় করেছেন শত শত মুসল্লি।

ভোলা সদরের বাংলা স্কুল মাঠে জাতীয় উলামায়ে মশায়েখ পরিষদের উদ্যোগে এই নামাজের আয়োজন করা হয়। এতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শত শত মুসল্লি অংশ নেন। এসময় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা পরম করুণাময় মহান আল্লাহর কাছে বিশেষ মোনাজাতে রহমত ও ক্ষমা চান।

নামাজে অংশ নেওয়া মাওলানা মো. মোতাসিম বিল্লাহ বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহর দয়া থাকলে সবকিছুই সম্ভব। তাই তীব্র তাপদাহের দুর্বিষহ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে বৃষ্টি প্রার্থনা করে আমরা আজকে নামাজ আদায় করেছি, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে বৃষ্টির জন্য বিশেষ দোয়া করেছি।”

তীব্র গরমে বৃষ্টির জন্য খোলা আকাশের নিচে নামাজ আদায় করেন মুসুল্লিরা। ছবি : প্রতিনিধি

লালমনিরহাট 

তীব্র দাবদাহে লালমনিরহাটের জনজীবন বিপর্যস্ত৷ ওষ্ঠাগত মানুষ ও পশুপাখির জীবন। হুমকির মুখে ফসলি জমি। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি চেয়ে জেলার ৪ উপজেলার ৫ স্থানে লক্ষাধিক মুসল্লি ইসতিসকার নামাজ আদায় করেছেন। প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির জন্য কেঁদে কেঁদে দোয়া করেছেন।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকাল থেকে বাদ জোহর পর্যন্ত সদর উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের নারকেলবাড়ী ঈদগাহ মাঠ, আদিতমারী উপজেলার জিএস স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠ, পাটগ্রাম উপজেলা সরকারি কলেজ মাঠ, কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা বাজার সংলগ্ন স্কুল মাঠ এবং লালমনিরহাট জেলা শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে এই বিশেষ নামাজ আদায় করা হয়।

নামাজের ইমামতি ও দোয়া পরিচালনা করেন মাদ্রাসার মুহাদ্দিস ড. মোহাম্মদ মাহিরুল ইসলাম।

নামাজ আদায় করতে আসা পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাশেদ মিয়া বলেন, “বৃষ্টি না হওয়ায় ইতোমধ্যে মরতে শুরু করেছে কৃষকের বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত। আল্লাহ যেন বৃষ্টি দেন এজন্য নামাজ পড়ে প্রার্থনা করলাম।”

লালমনিরহাট কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে নামাজ পরিচালনা শেষে মাদ্রাসার মুহাদ্দিস ড. মোহাম্মদ মাহিরুল ইসলাম বলেন, “তীব্র খড়ার কারণে দাবদাহ সৃষ্টি হয়েছে। পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। তীব্র তাপদহের কারণে সারা দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর থেকে পরিত্রাণের জন্য আমরা বিশেষ নামাজ আদায় করে মোনাজাত করলাম। মহান আল্লাহ যেন, শান্তির বৃষ্টি বর্ষণ করে প্রাণীকুলকে বাঁচান।”

Link copied!