দেশের নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ একটি দলিল হলো জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)। কাজে যোগদান থেকে শুরু করে জমি ক্রয় বিক্রয়, মামলা-মোকাদ্দমা, ব্যাংকে লেনদেন, কোথাও ভর্তি, বিদেশ যাত্রা এরকম নানা কাজে জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজন হয়। তবে এই এনআইডি কার্ডে তথ্যগত ভুল থাকলে পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। তাই চলুন এনআইডি কার্ডের ভুল সংশোধন নিয়ে বিস্তারিত জেনে নিই।
এখন ঘরে বসেই অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধন করা সম্ভব। আবেদন ফিও দেওয়া যাবে সহজে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা/জেলা নির্বাচন অফিসে গিয়েও প্রচলিত নিয়মে আবেদন করা যাবে।
আবেদনকারীর নিজস্ব তথ্য হালনাগাদ ও অন্যান্য সেবা নেওয়ার জন্য তাকে ভোটার হতে হবে এবং https://services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে নিবন্ধন বা সাইন আপ করতে হবে।
নিবন্ধন করার জন্য আবেদনকারীর বর্তমান কার্ডের নম্বর ও একটি কার্যকর মোবাইল নম্বর, আপনার জন্মতারিখ ও ঠিকানা সম্পর্কিত তথ্য দরকার হবে।
ভোটাররা অনলাইনে যেসব সেবা পাবেন
- প্রোফাইল তথ্য দেখতে পাবেন।
- নির্বাচনকালীন ভোটকেন্দ্র সম্পর্কিত তথ্য।
- কার্ডের তথ্য পরিবর্তন/সংশোধন/হালনাগাদের জন্য আবেদন।
- ঠিকানা অথবা ভোটার এলাকা পরিবর্তন/সংশোধন/হালনাগাদের আবেদন।
- হারানো/নষ্ট কার্ড পুনর্মুদ্রণের আবেদন ।
- ছবি, স্বাক্ষর ইত্যাদি পরিবর্তনের এপয়েন্টমেন্ট।
- আবেদনপত্রের বর্তমান অবস্থার তথ্য দেখতে পাবেন।
তথ্য পরিবর্তনের জন্য এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সরবরাহ করতে হবে। অনলাইনে আবেদনের সময় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেখা যাবে। আবেদন করতে হবে https://services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইট থেকে।
সাধারণ জিজ্ঞাসা ও উত্তর
১। প্রশ্ন : কার্ডের তথ্য কীভাবে সংশোধন করা যায়?
উত্তর : অনলাইন/এনআইডি রেজিস্ট্রেশন উইং/উপজেলা/থানা/জেলা নির্বাচন অফিসে ভুল তথ্য সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে। সংশোধনের পক্ষে পর্যাপ্ত উপযুক্ত দলিলাদি আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।
২। প্রশ্ন : কার্ডে কোনো সংশোধন করা হলে তার কি কোনো রেকর্ড রাখা হবে?
উত্তর : সকল সংশোধনের রেকর্ড সেন্ট্রাল ডাটাবেজে সংরক্ষিত থাকে।
৩। প্রশ্ন : ভুলক্রমে পিতা/স্বামী/মাতাকে মৃত হিসেবে উল্লেখ করা হলে সংশোধনের জন্য কী কী সনদ দাখিল করতে হবে?
উত্তর : জীবিত পিতা/স্বামী/মাতাকে ভুলক্রমে মৃত হিসেবে উল্লেখ করার কারণে পরিচয়পত্র সংশোধন করতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিচয়পত্র দাখিল করতে হবে।
৪। প্রশ্ন : আমি অবিবাহিত। আমার কার্ডে পিতা না লিখে স্বামী লেখা হয়েছে। কীভাবে তা সংশোধন করা যাবে?
উত্তর : সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা/জেলা নির্বাচন অফিসে আপনি বিবাহিত নন মর্মে প্রমাণাদিসহ আবেদন করতে হবে।
৫। প্রশ্ন : বিয়ের পর স্বামীর নাম সংযোজনের প্রক্রিয়া কী?
উত্তর : নিকাহনামা ও স্বামীর আইডি কার্ডের ফটোকপি সংযুক্ত করে অনলাইন/এনআইডি রেজিস্ট্রেশন উইং/ সংশ্লিষ্ট উপজেলা/ থানা/ জেলা নির্বাচন অফিস বরাবর আবেদন করতে হবে।
৬। প্রশ্ন : বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। এখন আইডি কার্ড থেকে স্বামীর নাম কীভাবে বাদ দিতে হবে?
উত্তর : বিবাহ বিচ্ছেদ সংক্রান্ত দলিল (তালাকনামা) সংযুক্ত করে অনলাইন/এনআইডি রেজিস্ট্রেশন উইং/সংশ্লিষ্ট উপজেলা/ থানা/ জেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করতে হবে।
৭। প্রশ্ন : বিবাহ বিচ্ছেদের পর নতুন বিবাহ করেছি এখন আগের স্বামীর নামের স্থলে বর্তমান স্বামীর নাম কীভাবে সংযুক্ত করতে পারি?
উত্তর : প্রথম বিবাহ বিচ্ছেদের তালাকনামা ও পরবর্তী বিয়ে কাবিননামাসহ সংশোধন ফর্ম পূরণ করে আবেদন করতে হবে।
৮। প্রশ্ন : আমি আমার পেশা পরিবর্তন করতে চাই কিন্তু কীভাবে করতে পারি?
উত্তর : অনলাইন/এনআইডি রেজিস্ট্রেশন উইং/উপজেলা/জেলা নির্বাচন অফিসে প্রামাণিক কাগজপত্র দাখিল করতে হবে। উলেখ্য, আইডি কার্ডে এ তথ্য মুদ্রণ করা হয় না।
৯। প্রশ্ন : আমার আইডি কার্ডের ছবি অস্পষ্ট, ছবি পরিবর্তন করতে হলে কী করা দরকার?
উত্তর : এক্ষেত্রে নিজে সরাসরি উপস্থিত হয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগে আবেদন করতে হবে।
১০। প্রশ্ন : নিজ/পিতা/স্বামী/মাতার নামের বানান সংশোধন করতে আবেদনের সঙ্গে কী কী দলিল জমা দিতে হবে?
উত্তর : এসএসসি/সমমান সনদ, জন্ম সনদ, পাসপোর্ট, নাগরিকত্ব সনদ, চাকরির প্রমাণপত্র, নিকাহ্নামা, পিতা/স্বামী/মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হয়।
১১। প্রশ্ন : নিজের ডাক নাম বা অন্য নামে নিবন্ধিত হলে সংশোধনের জন্য আবেদনের সঙ্গে কী কী দলিল জমা দিতে হবে?
উত্তর : এসএসসি/সমমান সনদ, বিবাহিতদের ক্ষেত্রে স্ত্রী/স্বামীর জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি, ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সম্পাদিত এফিডেভিট ও জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি, ওয়ারিশ সনদ, ইউনিয়ন/পৌর বা সিটি করপোরেশন হতে আপনার নাম সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র।
১২। প্রশ্ন : পিতা/মাতাকে ‘মৃত’ উল্লেখ করতে চাইলে কী কী সনদ দাখিল করতে হয়?
উত্তর : পিতা/মাতা/স্বামী মৃত উল্লেখ করতে চাইলে মৃত্যু সনদ দাখিল করতে হবে।
১৩। প্রশ্ন : ঠিকানা কীভাবে পরিবর্তন/ সংশোধন করা যায়?
উত্তর : শুধুমাত্র আবাসস্থল পরিবর্তনের কারণেই ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য বর্তমানে যে এলাকায় বসবাস করছেন সেই এলাকার উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে ফর্ম-১৩ এর মাধ্যমে আবেদন করা যাবে। তবে একই ভোটার এলাকার মধ্যে পরিবর্তন বা ঠিকানার তথ্য বা বানানগত কোনো ভুল থাকলে সাধারণ সংশোধনের আবেদন ফর্মে আবেদন করে সংশোধন করা যাবে।
১৪। প্রশ্ন : আমি বৃদ্ধ ও অত্যন্ত দরিদ্র ফলে বয়স্ক ভাতা বা অন্য কোনো ভাতা খুব প্রয়োজন। কিন্তু নির্দিষ্ট বয়স না হওয়ার ফলে কোনো সরকারি সুবিধা পাচ্ছি না। লোকে বলে আইডি কার্ড –এ বয়সটা বাড়ালে ওই সকল ভাতা পাওয়া যাবে?
উত্তর : আইডি কার্ড এ প্রদত্ত বয়স প্রামাণিক দলিল ব্যতিত পরিবর্তন সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, প্রামানিক দলিল তদন্ত ও পরীক্ষা করে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
১৫। প্রশ্ন : একই পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের কার্ডে পিতা/মাতার নাম বিভিন্নভাবে লেখা হয়েছে কিভাবে তা সংশোধন করা যায়?
উত্তর : সকলের কার্ডের কপি ও সম্পর্কের বিবরণ দিয়ে অনলাইন/এনআইডি রেজিস্ট্রেশন উইং/ উপজেলা/ জেলা নির্বাচন অফিস বরাবর পর্যাপ্ত প্রামাণিক দলিলসহ আবেদন করতে হবে।
১৬। প্রশ্ন : আমি পাশ না করেও অজ্ঞতাবশত শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি বা তদুর্দ্ধ লিখেছিলাম এখন আমার বয়স বা অন্যান্য তথ্যাদি সংশোধনের উপায় কী?
উত্তর : আপনি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এস.এস.সি পাশ করেননি, ভুলক্রমে লিখেছিলেন মর্মে হলফনামা করে এর কপিসহ সংশোধনের আবেদন করলে তা সংশোধন করা যাবে।
১৭। প্রশ্ন : আইডি কার্ডে অন্য ব্যক্তির তথ্য চলে এসেছে। এ ভুল কীভাবে সংশোধন করা যাবে?
উত্তর : ভুল তথ্যের সংশোধনের পক্ষে পর্যাপ্ত দলিল উপস্থাপন করে অনলাইন/এনআইডি রেজিস্ট্রেশন উইং/সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা/জেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে বায়োমেট্রিক যাচাই করার পর সঠিক পাওয়া গেলে সংশোধনের প্রক্রিয়া করা হবে।
১৮। প্রশ্ন : রক্তের গ্রুপ অন্তর্ভূক্ত বা সংশোধনের জন্য কী করতে হয়?
উত্তর : রক্তের গ্রুপ অন্তর্ভুক্ত বা সংশোধন করতে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়কৃত ডায়াগনস্টিক রিপোর্ট দাখিল করতে হয়।
১৯। প্রশ্ন : বয়স/ জন্ম তারিখ পরিবর্তন করার প্রক্রিয়া কী?
উত্তর : এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার সনদের সত্যায়িত ফটোকপি আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে। এসএসসি বা সমমানের সনদপ্রাপ্ত না হয়ে থাকলে সঠিক বয়সের পক্ষে সকল দলিল উপস্থাপনপূর্বক আবেদন করতে হবে। আবেদনের পর বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনে ডাক্তারি পরীক্ষা সাপেক্ষে সঠিক নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে।
২০। প্রশ্ন : স্বাক্ষর পরিবর্তন করতে চাই, কীভাবে করতে পারি?
উত্তর : নতুন স্বাক্ষরের নমুনাসহ গ্রহণযোগ্য প্রমাণপত্র সংযুক্ত করে আবেদন করতে হবে। তবে স্বাক্ষর একবারই পরিবর্তন করা যাবে।
২১। প্রশ্ন : আমার জন্ম তারিখ যথাযথভাবে লেখা হয়নি, আমার কাছে প্রামাণিক কোনো দলিল নেই, কীভাবে সংশোধন করা যাবে?
উত্তর : সংশ্লিষ্ট উপজেলা/জেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করতে হবে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
২২। প্রশ্ন : একটি কার্ড কতবার সংশোধন করা যায়?
উত্তর : এক তথ্য শুধুমাত্র একবার সংশোধন করা যাবে। তবে যুক্তিযুক্ত না হলে কোনো সংশোধন গ্রহণযোগ্য হবে না।
তথ্য সূত্র : বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন