• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

‍‍‘আয়নাঘরের‍‍’ প্রমাণ মিলেছে, মুছে ফেলা হয়েছে আলামত


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২৪, ০২:৩২ পিএম
‍‍‘আয়নাঘরের‍‍’ প্রমাণ মিলেছে, মুছে ফেলা হয়েছে আলামত

প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) কার্যালয়ে গিয়ে বহুল আলোচিত ‍‍`আয়নাঘর‍‍` বা বন্দীশালার সন্ধান পেয়েছে গুমের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিশন। কমিটির সদস্যরা সেখানে ঘুরে দেখে আলামত নষ্টের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) ঢাকার গুলশানে কমিশনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন কমিশনের সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, তদন্তকাজে নেমে মাত্র দুই সপ্তাহে গুমের প্রায় ৪০০ অভিযোগ তারা পেয়েছেন। 

তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি গুমের অভিযোগ এসেছে র‍্যাব, ডিজিএফআই, ডিবি ও সিটিটিসির বিরুদ্ধে।

ডিজিএফআই কার্যালয়ের বন্দীশালা দেখার অভিজ্ঞতা জানিয়ে বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “ডিজিএফআইয়ের যেটা আয়নাঘর বা জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল, ওইটা ডিজিএফআইয়ের কমপাউন্ডে আছে, এটা দোতলা বিল্ডিং। নিচতলায় প্রায় ২০ থেকে ২২টি সেল আছে। ওপরের তলায় কিছু রুম আছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এটা বলা হচ্ছে আয়নাঘর, কিন্তু এটা বেসিক্যালি জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল। ২৫ সেপ্টেম্বর আমরা ডিজিএফআইয়ের আয়নাঘর পরিদর্শন করেছি। ১ অক্টোবর আমরা ডিবি ও সিটিটিসি পরিদর্শন করেছি। তবে সেখানে কোনো বন্দী আমরা পাইনি। সম্ভবত ৫ আগস্টের পর সেখান থেকে সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। র‍্যাবেরটায় আমরা এখনো পরিদর্শন করিনি, সামনে করব।”

আয়নাঘরের বিভিন্ন আলামত নষ্ট করা হয়েছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে গুম কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন বলেন, “সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ অ্যাভিডেন্স তারা নষ্ট করে দিয়েছে, ওয়ালে পেইন্ট করে। ভিকটিমরা বলেছিল ওয়ালে তাদের অনেক কথা, নাম-এগুলো লেখা ছিল। অনেকের ফোন নম্বর, অনেকের ঠিকানা লেখা ছিল। ওই জিনিসগুলো পেইন্ট হওয়ার কারণে সেটা আর আমরা ওইখানে পাইনি। গত ৫ আগস্ট যখন রেজিম চেঞ্জ হলো, তারপর পরই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে আমাদের ধারণা।”

কমিশনে কেমন অভিযোগ জমা পড়ছে এ প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ভার্চুয়ালি কাজ শুরুর পর ১৩ দিনে তারা ৪০০ অভিযোগ পেয়েছেন। অনেকে লিখিতভাবে অভিযোগ পাঠিয়েছেন, অনেকে ইমেইলে পাঠিয়েছেন। আপনারা বুঝছেন এটা একটি সময়সাপেক্ষ কাজ। 

তিনি আরও বলেন, “রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক যারা গুম হয়েছেন, তাদের অভিযোগগুলো নিয়েই আমরা কাজ করেছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদেরও আমরা ডাকব। বক্তব্যের জন্য সমন দেব। অভিযুক্তরা না এলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজেদের নিরাপদ মনে করছেন কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে অবসরপ্রাপ্ত এ বিচারপতি বলেন, “আমরা নিজেদের নিরাপদ মনে করছি। কোনো প্রতিষ্ঠানের চাপ নেই আমাদের ওপর।” 

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ‍‍`গুমের‍‍` ঘটনা তদন্তে গত ২৭ আগস্ট অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের এ কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

কমিশন গঠনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, তদন্তকারী সংস্থা এবং অনুরূপ যে কোনো বাহিনী বা সংস্থার কোনো সদস্য বা সরকারের মদতে, সহায়তায় বা সম্মতিতে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টি কর্তৃক ‍‍`আয়নাঘর‍‍` বা যে কোনো জ্ঞাত বা অজ্ঞাত স্থানে বলপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, বলপূর্বক গুমের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান চিহ্নিতকরণ ও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ প্রদান এবং বলপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংস্কারের সুপারিশসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কার্যাদি সম্পাদনের জন্য এই কমিশন গঠন করা হয়েছে।

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন পর্যন্ত সময়ের ঘটনা কমিশনের বিবেচনায় আনা যাবে। গত ১২ সেপ্টেম্বর অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া তুলে ধরে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে কমিশন। অভিযোগ জানাতে প্রথমে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হলেও পরে তা ১০ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

Link copied!