দুই মাস ১৭ দিনেই চালু হলো মিরপুর-১০ মেট্রো স্টেশন। মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) চালু হয় স্টেশনটি। এটি সংস্কারে খরচ হয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এর আগে ক্ষতিগ্রস্ত শ্যাওড়াপাড়া স্টেশন মেরামতে খরচ হয় ২০ লাখ ২৬ হাজার টাকা। অথচ এ দুটি স্টেশন মেরামতে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ের কথা জানিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এ ছাড়া মিরপুর-১০ স্টেশন মেরামত করতে ১ বছর সময় লাগবে বলে জানানো হয়েছিল।
মঙ্গলবার সকালে স্টেশনটি খুলে দেওয়া হলে প্রবেশ করতে থাকেন যাত্রীরা। এদিন ভিড় কিছুটা কম দেখা গেছে। তবে সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়ালে বাড়তে থাকে যাত্রী সংখ্যা।
টিকিট সংগ্রহ করতে আসা হালিমা আকতার নামের এক যাত্রী বলেন, “স্টেশন চালু হওয়ার খবর পেয়ে গণপরিবহন থেকে নেমে মেট্রোতে চলে আসি। আনন্দের বিষয় হলো আসা মাত্রই টিকিট সংগ্রহ করেছি। অন্যান্য স্টেশনে লম্বা লাইন দেখে অনেক সময় ভোগান্তি হবে জেনেও গণপরিবহনে চেপে বসি।”
সাজ্জাদ হোসাইন নামের আরেক যাত্রী বলেন, “গতকাল খবরের কাগজে দেখেছি মিরপুর-১০ স্টেশন চালু হবে। তাই চলে আসলাম, আমি মতিঝিল যাবো। যদি স্টেশনটি আজকে চালু না হতো তাহলে সেই পুরোনো যানজট ঠেলে মতিঝিল যেতাম। সময়তো অপচয় হতোই, উলটো যে কাজে যাচ্ছি সেটি সময়মতো সম্পন্ন করতে না পারার শঙ্কাও থাকতো।”
পরিবার নিয়ে মিরপুর-১০ স্টেশনে আসেন আব্দুল জব্বার নামের আরেক যাত্রী। তিনি অনেকটা ঠাট্টার সুরে বলেন, “১ বছর মনে হয় ২ মাস ১৭ দিনেই শেষ হয়ে গেল। বছর এতো দ্রুত কেটে যাবে ভাবিনি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ। আজকে আমার ৯ বছরের মেয়েকে নিয়ে এসেছি সে প্রথম মেট্রোতে চড়বে। সবকিছু মিলিয়ে ঠিকঠাক আছে।”
চালু হওয়া মিরপুর-১০ স্টেশনে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিং করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, মেট্রোরেলের সব স্টেশন মিলিয়ে আরও খরচ লাগবে ১৭ কোটি টাকা। মোট লাগবে ১৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। তবে এই টাকা এই মেট্রো থেকেই নেওয়া হবে।
এ সময় উপদেষ্টা জানান, যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি সেগুলোর রিভাইস হবে। সব বিভাগে হাজার হাজার কোটি টাকা অপচয় করা হয়েছে। আগামীতে প্রকল্প সময়ের আগেই শেষ করতে হবে। সময় বেশি নেওয়া যাবে না। অপচয় রোধ করে করতে হবে।
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, মেট্রোরেলের ভাড়া কমানোর ব্যাপারে চেষ্টা করা হবে। বিভিন্ন অজুহাতে প্রকল্পের মেয়াদ ও টাকা বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পে দুর্নীতি নাকি অপচয়, সেটি চিহ্নিত করতে হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, টিকিট কাটার যন্ত্র ও গেট উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ ও বিজয় সরণি স্টেশন থেকে নিয়ে বসানো হয়েছে। এসব স্টেশনে যাত্রীর চাপ তুলনামূলক কম। সেখানকার একাধিক মেশিন ও গেটের মধ্য থেকে কিছু স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া উত্তরায় মেট্রোরেলের ডিপোর ভেতর প্রদর্শনকেন্দ্রে আটটি গেট ছিল, সেগুলো এনে লাগানো হয়েছে। পরবর্তী সময়ে আমদানি করে ওই সব জায়গায় গেট ও টিকিট কাটার যন্ত্রগুলো বসানো হবে। তবে আমদানি করলেও আগের সরকার যে ব্যয় প্রাক্কলন করেছিল, তত টাকা লাগবে না।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গত ১৯ জুলাই মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ দুটি স্টেশন। এরপরই দীর্ঘ সময়ের জন্য অনিশ্চিত হয়ে যায় মেট্রোরেল চলাচল। ৩৭ দিন বন্ধ থাকার পর গত ২৫ আগস্ট ফের চালু হয় মেট্রোরেল। তবে বন্ধ রাখা হয় মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশন। এর ২৬ দিন পর কাজীপাড়া স্টেশন চালু করা হয়।
ডিএমটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, তৎকালীন সরকারের সময় মেট্রোরেলের দুটি স্টেশনের মেরামতের জন্য সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছিল। তবে কাজীপাড়া স্টেশন মেরামতে ২০ লাখ ২৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশন মেরামতে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশনে স্বয়ংক্রিয় টিকিট বিক্রির যন্ত্র, কম্পিউটার, ভাড়া পরিশোধ করে প্রবেশ ও বের হওয়ার স্বয়ংক্রিয় গেট, স্টেশনের ইলেকট্রনিক পর্দা ও কিছু কাচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কিছু সরঞ্জাম ও উপকরণ স্থানীয় বাজার থেকে কেনা হয়েছে।