রাজধানীর বংশালের মিরনজিল্লা হরিজন কলোনিতে উচ্ছেদ অভিযানের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে এ বিষয়ে জারি করা রুল হাইকোর্টকে দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছেন।
এ সময় আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ব্যারিস্টার অনীক আর হক। অপরপক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুরাদ রেজা।
এর আগে, বুধবার রাজধানীর বংশালের মিরনজিল্লা হরিজন কলোনিতে উচ্ছেদ অভিযানের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন আপিল বিভাগ। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নতুন করে অভিযান পরিচালনার উদ্যোগের বিরুদ্ধে করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত এ আদেশ দেন।
এ আদেশের পর আইনজীবী অনীক আর হক বলেন, ডিএসসিসির নতুন করে বংশালের মিরনজিল্লা হরিজন কলোনিতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার উদ্যোগ হিসেবে; নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ মোতায়েন চয়ে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেয়। পাশাপাশি স্থানীয় কাউন্সিলকে এ বিষয়ে সহায়তা করতে বলা হয়।
এরপর হরিজন কলোনিতে ফের অভিযানের উদ্যোগ নিলে সেখানে বসবাসরতরা আপিল বিভাগে আবেদন করা করেন বলেও জানান তিনি।
১৩ জুন বংশালের মিরনজিল্লা হরিজন কলোনিতে উচ্ছেদ অভিযানের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি বসবাসের বিকল্প ব্যবস্থা না করে হরিজনদের উচ্ছেদ না করতে নির্দেশ দেন আদালত। ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষকে এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
হরিজন কলোনিতে উচ্ছেদ অভিযানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
আদালতে হরিজনদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন রিটকারি তিন আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা, মনজ কান্তি ভৌমিক ও আইনজীবী উৎপল বিশ্বাস।
রুলে বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদ অভিযান কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এরপর হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে সিটি করপোরেশন। পরে চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশের বিষয়ে `নো অর্ডার` দেন।
এর আগে রাজধানীর আগা সাদেক লেনের মিরনজিল্লা হরিজন সিটি কলোনি উচ্ছেদের জন্য নোটিশ দেয় সিটি করপোরেশন। বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী।
প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ আমলে ভারতের তেলেগু এলাকা থেকে আসা এই হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন শত বছরের বেশি সময় ধরে এই কলোনিতে বসবাস করে আসছেন। মিরনজিল্লার সুইপার কলোনিতে বর্তমানে প্রায় চার হাজার লোক বাস করেন। এ কলোনির একটি অংশের আধুনিক কাঁচাবাজার নির্মাণ করতে চায় সিটি করপোরেশন। এজন্য সেখানে থাকা স্থাপনা উচ্ছেদে গত সোমবার গিয়েছিলেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। তারা হরিজন সম্প্রদায়ের তীব্র আপত্তি ও বাধার মুখে পড়েন। পরে তারা একটি দেয়াল ও কয়েকটি স্থাপনা ভেঙে চলে যান। সিটি করপোরেশনের এই উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদে, সেখানে বিক্ষোভ করে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন।