মানুষের প্রয়োজন যেখানে অতীব, সেখানেই হানা দিচ্ছে অসাধু চক্র (সিন্ডিকেট)। সারা দেশে যখন ডেঙ্গুর তাণ্ডব চলছে, আক্রান্ত রোগীর জন্য প্রয়োজন শিরায় দেওয়া স্যালাইন। এবার সেই স্যালাইন মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে সিন্ডিকেটের অসাধু ওই চক্র। রোগীর প্রয়োজনকে পুঁজি করে এবার এই স্যালাইনের অতিরিক্ত দাম নিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের হারে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে গেছে। চলতি বছর ৮০০ ছাড়িয়েছে মৃত্যুর সংখ্যা। এ অবস্থায় রাজধানীর বাইরে থেকে ডেঙ্গু রোগী ঢাকা শহরের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য না আনার বা না পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শিরায় দেওয়া স্যালাইনের কৃত্রিম সংকট নিরসনের লক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, কেউ যেন শিরায় দেওয়া স্যালাইন অনৈতিকভাবে মজুত না করেন, তার জন্য জেলায় জেলায় অভিযান চালাবেন সিভিল সার্জনরা। রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) ডেঙ্গু নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়। ব্রিফিংয়ে মূল বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক আহমেদুল কবির। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়, কোনো প্রতিষ্ঠান শিরায় দেওয়া স্যালাইন মজুত করছে কি না, তা তল্লাশি করতে সিভিল সার্জনদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ব্রিফিং শেষে আহমেদুল কবির বলেন, “স্যালাইন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আমরা বেশ কয়েকবার সভা করেছি। তারা দিনরাত স্যালাইন উৎপাদন করছে এবং উৎপাদনের পরিমাণ চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অসাধু একটি চক্র স্যালাইন অবৈধভাবে মজুত না করলে ঘাটতি পড়ার কথা নয়।”
ব্রিফিংয়ে আহমেদুল কবির বলেন, “সরকার ডেঙ্গুর সব ধরনের পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। কেউ যেন নির্ধারিত ফির বেশি মূল্য না নেয়, তার জন্য সিভিল সার্জনদের নজরদারি বাড়াতে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।”
র্যাপিড রেসপন্স টিম তৈরির নির্দেশ
বাইরের জেলার রোগী ঢাকায় রেফার (পাঠানো) না করার নির্দেশনা দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতিটি হাসপাতালে র্যাপিড রেসপন্স টিম তৈরি করতে বলেছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই সিভিল সার্জনদের চিঠি পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আহমেদুল কবির বলেন, “আমরা রোববার সব সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দিয়েছি, প্রতিটি হাসপাতালে যেন র্যাপিড রেসপন্স টিম তৈরি করা হয়। এই টিম যারা অপেক্ষাকৃত খারাপ অবস্থার রোগী, তাদের প্রতিনিয়ত মনিটরিং করবে। রোগীর অবস্থা যাতে আরও খারাপ না হয় এবং এ রকম কোনো রোগীকে ঢাকার দিকে যেন পাঠানো না হয়, তা দেখভাল করবে।”
এ সময় দেশে অসাধু উপায়ে স্যালাইন এবং বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ওষুধের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, ‘আমাদের দেশে যে স্থিতি অবস্থা, আমাদের যে রোগীর সংখ্যা তার দ্বিগুণ ধরে আমাদের স্থানীয় উৎপাদনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেছি। স্যালাইনের সংকট কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের স্থানীয় যেসব কোম্পানি আছে তার বাইরেও আমরা স্যালাইন আমদানি করে কৃত্রিম সংকট কাটিয়ে ওঠার পদক্ষেপ নিয়েছি।
স্যালাইনের সরবরাহ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে দেখেছেন ১০০ টাকার স্যালাইন ৪০০ টাকা রাখা হচ্ছে। স্টকে থাকলেও ক্রেতাদের না করা হচ্ছে। জাতীয় দুর্যোগে যারা এমন করেন তারা দেশপ্রেমিক না।”