বাংলাদেশ ব্যাংক নাইট (বিবি নাইট) আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের উদ্যোগে ১৮ অক্টোবর রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হল বসুন্ধরায় এ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। এতে যোগ দেওয়ার জন্য দুই সপ্তাহ আগেই প্রচার শুরু করা হয়েছে। নিবন্ধন করা যাবে শুক্রবার পর্যন্ত।
বাংলাদেশ ব্যাংকে তিনটি দল রয়েছে নীল, সবুজ ও হলুদ। এর মধ্যে সবুজ দল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে বৃহস্পতিবার স্মারকলিপি দিয়ে বিবি নাইট বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছে। তবে গভর্নর অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন না বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।
অনুষ্ঠান বন্ধ করার যুক্তি হিসেবে স্মারকলিপিতে ব্যাংক খাতের বর্তমান নাজুক অবস্থাকে সামনে আনা হয়েছে। তাদের মতে, যে সময়ে টাকা তুলে নিতে ব্যাংকে ব্যাংকে গ্রাহকদের লাইন, এটিএম বন্ধ এবং চেক প্রত্যাখ্যানের ঘটনা ঘটছে, ঠিক এমন সময়ে এ ধরনের আয়োজনের বিপক্ষে তারা।
জানতে চাইলে সবুজ দলের সভাপতি মো. মিজানুর রহমান বলেন, “সময়টা ভালো নয়। আগের সরকারের আমলে ব্যাংক খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যাংকে গিয়ে মানুষ যখন নিজের টাকাই তুলতে পারছেন না, ঠিক তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পক্ষে আনন্দ-ফুর্তি করা মানায় না।”
এদিকে ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর প্রধান অতিথি ও চার ডেপুটি গভর্নর বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
এতে অংশ নেবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহকারী পরিচালক (এডি) থেকে নির্বাহী পরিচালক (ইডি) পদমর্যাদার কর্মকর্তারা। সে জন্যই নাকি অনুষ্ঠানটিকে বলা হচ্ছে ‘বিবি নাইট: এডি টু ইডি’।
এ অনুষ্ঠানকে দুটি ভাগ করা হয়েছে। প্রথম অংশে থাকছে বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম), যা শুরু হওয়ার কথা বিকেল সাড়ে চারটায়। এতে শুধু কাউন্সিলের সদস্যরা উপস্থিত থাকছেন। দ্বিতীয় অংশ ‘বিবি নাইট: এডি টু ইডি’ শুরু হবে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। এ পর্বেই প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিদের উপস্থিত থাকার কথা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সব অফিসের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের জন্য অনুষ্ঠানটি উন্মুক্ত।
কাউন্সিলের সদস্যদের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণে কোনো টাকা দিতে হবে না। তবে কাউন্সিলের সদস্য নন এবং পরিবারের সদস্যদের রাতের খাওয়া (ডিনার) ও হালকা নাশতা বাবদ দিতে হবে ১ হাজার ৬৭৫ টাকা করে। আয়োজনটির দ্বিতীয় অংশে আলোচনা সভা, বিদায় সংবর্ধনা, প্রীতিভোজ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র্যাফল ড্র থাকবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অভ্যন্তরীণ শিল্পীদের বাইরের শিল্পীদের পরিবেশনা থাকবে। র্যাফেল ড্রর বিশেষ আকর্ষণ বা পুরস্কার হিসেবে রাখা হয়েছে ঢাকা-ব্যাংকক, ঢাকা-কুয়ালালামপুর, ঢাকা-কলকাতা, ঢাকা-কক্সবাজার পথের কাপল টিকিট।
জানা গেছে, যারা কোনো কারণে এজিএম ও বিবি নাইটে অংশ নিতে পারবেন না, তাদের জন্যও থাকবে বিশেষ ব্যবস্থা। ওই দিনের আগে বা পরে অফিস খোলার দিনে তাদের দুপুরের খাবার সরবরাহ করা হবে। প্রতিটি ফ্লোরে দুজন কর্মকর্তা কাউন্সিলের পক্ষে ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করছেন।
তবে আয়োজকদের নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক শ্রেণির কর্মকর্তা প্রশ্ন তুলেছেন। কারণ, কাউন্সিলের নির্ধারিত মেয়াদ আগেই শেষ হয়ে গেছে এবং তখন এ ধরনের অনুষ্ঠান দেখা যায়নি। নির্বাচিত সভাপতি এইচ এম দেলোয়ার হোসেন কয়েক মাস আগে অবসরে গেছেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি। এখন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে আছেন তানভীর আহমেদ। কোষাধ্যক্ষ জহুরুল হক পদত্যাগ করেছেন মাসখানেক আগে।