ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে হাইকোর্টের আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে রাজধানীর আগারগাঁও, মহাখালী, গাবতলী, মোহাম্মদপুর এবং ডেমরা এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালকেরা সড়কে নেমে বিক্ষোভ করছেন।এ ছাড়া মহাখালীতে রেললাইনে রিকশা ফেলে অবরোধ পালন করছেন চালকরা।
বৃহস্পতিবারের (২১ নভেম্বর) এমন অবরোধ কর্মসূচিতে রাজধানীর সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া তাদের এই আন্দোলনের ফলে এসব এলাকার প্রধান সড়কে যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে। স্কুলগামী শিক্ষার্থী, অফিসগামী মানুষসহ সব ধরনের যাত্রীরা এতে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।
সকাল থেকেই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত এবং পুলিশের নিয়মিত ধরপাকড়ের বিরুদ্ধে চালকেরা এই বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের দাবি, এই সিদ্ধান্ত তাঁদের রোজগারে সরাসরি প্রভাব ফেলছে এবং তারা আর্থিক অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।
ট্রাফিক-গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. জিয়াউর রহমান জানিয়েছেন, সকাল সাড়ে ৯টার পর থেকে ১ হাজারের মতো চালক একত্রিত হয়ে মহাখালী সড়কে অবস্থান নেন। তবে বিক্ষোভকারীদের কেউই রিকশা নিয়ে আসেননি, তাঁরা পায়ে হেঁটেই অবস্থান করছেন। বিক্ষোভকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করছেন। তবে সড়ক অবরোধের কারণে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছে। পুলিশ তাঁদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করছে।
মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর এলাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চলাচল তিন দিনের মধ্যে বন্ধ বা বিধিনিষেধ আরোপ করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এরপর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের উদ্যোগ নেয়। এতে ক্ষুব্ধ রিকশাচালকরা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অবরোধ কর্মসূচি পালন শুরু করেন। ১৯ নভেম্বর এই নির্দেশের পর এর প্রতিবাদে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী দয়াগঞ্জে বিক্ষোভ করছেন অটোরিকশাচালকেরা। তাদের ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নেয় পুলিশ।
এর প্রতিবাদে বুধবারও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে। ব্যাটারিচালিত রিকশা নিষিদ্ধের প্রতিবাদে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনের সামনের চৌরাস্তায় অবস্থান নেন বিক্ষোভকারী চালকেরা। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলে বিক্ষোভ। পরে শতাধিক রিকশার একটি মিছিল চলে আসে মিরপুর রোডের প্রধান সড়কে। আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশন ঘুরে রিকশার এই মিছিল চলে যায় শ্যামলী পর্যন্ত।
মহাখালীতে অবরোধ কর্মসূচিতে থাকা নাছিম আখতার নামের একজন বলেন, “দুইদিন ধইরা রিকশা বন্ধ, বাসায় বাজারও বন্ধ। এইভাবে পেটে লাথি মারলে তো না খেয়ে মরতে হবে। তাই আমরা অবরোধ পালন করছি। ট্রেন বন্ধ হলে কিছু যায় আসে না। রিকশা চালাতে দিলে ট্রেনও চলবে, নইলে আমরা সব কিছু বন্ধ করে দিবো।”
ট্রেন যোগাযোগ বন্ধের কারণে বিপাকে পড়েছেন রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াতকারী যাত্রীরা। রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষমাণ যাত্রীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
বসিলা এলাকার এক রিকশাচালক বলেন, “সকালে রিকশা নিয়া বের হওয়ার পর আমার রিকশার তার কেটে দিয়েছে। আমি কারণ জিজ্ঞাসা করলে আমাকে চড়-থাপ্পড় মেরেছে। আমাদের দাবি, আমাদের রোজগারের পথ বন্ধ করা যাবে না।”
মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ এলাকায় যানজটে আটকে থাকা এক যাত্রী বলেন, “আধাঘণ্টা ধরে এখানে আটকে আছি। অফিসের সময় পাড় হয়ে গেছে কিন্তু রাস্তা ক্লিয়ার না হওয়ায় যেতে পারছি না।”
বর্তমানে প্রায় ১৩ লাখ রিকশা চলাচল করছে রাজধানীতে। যার বড় একটি অংশ ব্যাটারিচালিত। পুরাতন প্যাডেলচালিত অনেক রিকশায় ব্যাটারি লাগিয়ে যান্ত্রিক করা হচ্ছে। রাজধানীর মূল সড়কের চেয়ে অলিগলিতে ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল বেশি। সুযোগ পেলে মূল সড়কও দাপিয়ে বেড়ায় এসব রিকশা।