ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপরই ভিসা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় ভারত। পরে সীমিত আকারে ভিসা কার্যক্রম চালু হলেও আশঙ্কজনকহারে কমে গেছে ভিসাপ্রাপ্তির সংখ্যা। ফলে বাংলাদেশ থেকে ভারতগামী যাত্রী বা পর্যটকের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।
আর এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছে এয়ারলাইন্সগুলো। যাত্রী সংকটের কারণে তাদের ফ্লাইটের সংখ্যা একদিকে যেমন কমাতে বাধ্য হয়েছে, তেমনি অনেক প্রতিষ্ঠান ভারতে ফ্লাইট পরিচালনা আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে ভারতগামী ফ্লাইট নেমে এসেছে একেবারে অর্ধেকে। খবর টিবিএসের।
সূত্রমতে, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ভারতের বিভিন্ন রুটে অন্তত ছয়টি বিমান সংস্থা ফ্লাইট পরিচালনা করছে। সংস্থাগুলো হচ্ছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার, ভারতের ভিস্তারা এয়ারলাইন্স, এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিগো। এসব কোম্পানি ঢাকা থেকে সরাসরি কলকাতা, দিল্লি, চেন্নাই ও মুম্বাই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
এসব সংস্থার মধ্যে নভোএয়ার আগে প্রতিদিন একটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করত। অথচ গত ১ আগস্টে এই সংখ্যা নেমে এসেছে সপ্তাহে তিনটিতে। তবে আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে সংস্থাটি কলকাতা ফ্লাইট একেবারেই বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নভোএয়ারের মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস প্রধান মেস-বাহ-উল ইসলাম বলছেন, “ভিসা না পাওয়ার কারণে অনেকেই ভারতে যেতে পারছেন না। ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কলকাতায় ফ্লাইট বন্ধ থাকবে।”
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে আগে প্রতিদিন দুটি করে ফ্লাইট চললেও এখন তা নেমে এসেছে একটিতে। একইভাবে দিল্লিতে সপ্তাহে তিনটির বদলে একটিতে, চেন্নাইয়ে তিনটির বদলে সপ্তাহে একটি করে ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে। বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম বলেন, “দুই সপ্তাহ ধরে যাত্রী কম হওয়ায় পরিকল্পনা করে আমাদের ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়েছি।”
একইভাবে ট্যুরিস্ট ভিসা পুরোপুরি বন্ধ থাকায় সপ্তাহে যে ১৪টি ফ্লাইট চলত ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের, সেখানে বর্তমানে নেমে এসেছে ৬টিতে। চট্টগ্রাম থেকে কলকাতায় যে ফ্লাইট চলত সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। চেন্নাইতে সপ্তাহে যেখানে ১১টি চলত, এখন নেমে এসেছে ৫টিতে।
বিমান সূত্রমতে, ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে দিয়েও লোকসান গুনতে হচ্ছে বিমান সংস্থাগুলোকে। কারণ ঢাকা থেকে কলকাতা, চেন্নাই ও দিল্লি রুটে মিলছে ধারণক্ষমতার মাত্র অর্ধেক যাত্রী। যদিও এসব রুটে ঢাকায় ফেরার সময় কিছুটা বেশি যাত্রী পাচ্ছে।
ইউ-এস বাংলার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, “প্রায় মাস খানেক ধরে যাত্রীসংকট। সামনে আরও কমবে। যাত্রী সংকটে অনেক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছি আমরা। আশা করছি দুই দেশের নীতি নির্ধারকরা এটার দ্রুত সমাধান করবেন।”
সম্প্রতি শুধু মেডিকেল ও শিক্ষার্থীদের জন্য ভারত সরকার সীমিত পরিসরে ভিসা কার্যক্রম শুরু করেছে। এ অবস্থায় যারা শুধু ভ্রমণ কিংবা অন্য কাজে ভারতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন, তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। এ কারণে ফ্লাইটগুলোতে যাত্রীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।