নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) নিজেদের সক্ষমতা জানান দিতে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালায়। সেই হামলায় করা মামলার যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া পলাতক আসামি তুহিন রেজাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তুহিন ১৮ বছর ধরে পলাতক ছিলেন। তিনি জেএমবির সদস্য বলে জানিয়েছে র্যাব। পরিচয় গোপন করে তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ভিডিও এডিটর হিসেবে কাজ করতেন।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) রাতে রাজধানীর তেজগাঁও রেলগেট এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শুক্রবার (২৩ জুন) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “সিরিজ বোমা হামলায় সারা দেশের মতোই ঝিনাইদহ জেলার ডিসি অফিস, জজ কোর্ট ও পায়রা বন্দরসহ কয়েকটি এলাকায় একই সময়ে একযোগে সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে একটি মামলা করা হয়। মামলাটি ঝিনাইদহ স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষে অভিযুক্ত ২১ জনের সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করলে আদালত তাদের অভিযোগপত্র পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে ২০০৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড এবং ৭ জনকে খালাস দেয়।”
তিনি বলেন, “পরবর্তীতে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা চালানো শুরু করে। এরই প্রেক্ষিতে এখন পর্যন্ত সাজাপ্রাপ্ত ১৪ জন আসামির মধ্যে ১২ জনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। পলাতক ২ জনের মধ্যে মামলার ১০ নম্বর আসামি ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে পলাতক জেএমবি সদস্য তুহিন রেজাকে বৃহস্পতিবার রাতে তেজগাঁও রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৭ নম্বর আসামি মোহন এখনো পলাতক রয়েছেন।”
আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, গ্রেপ্তার তুহিন ২০০৪ সালে জেএমবির ঝিনাইদহ সদর শাখায় সদস্য হিসেবে যোগ দেন। যোগদানের পর থেকে তিনি এই শাখার লিফলেট তৈরি, লিখিত প্রচার-প্রচারণার সম্পাদনা, গোপন ও নাশকতমূলক খবরাখবর আদান-প্রদান, বিভিন্ন ভিডিও এডিটিংয়ের মাধ্যমে তৈরি করা বিভ্রান্তিমূলক প্রামাণ্যচিত্র দিয়ে তরুণদের পথভ্রষ্ট করতেন।
আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, “২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট হামলাকে কেন্দ্র করে পূর্ববর্তী দীর্ঘ সময় ধরে তারা হামলার নীলনকশা সাজায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৭ আগস্ট ভোর থেকেই অন্য হামলাকারীদের সঙ্গে তুহিন আদালত চত্বরের আশপাশে অবস্থান নেয় এবং হামলার সময় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এলোপাতাড়ি বোমা হামলার পর তারা বিভিন্ন দিকে দৌড়ে পালিয়ে যায়।”
তুহিন ১৭ আগস্ট বোমা হামলার পর ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে এসে ঝিনাইদহ সদরে জঙ্গি ক্যাম্পে কিছুদিন গাঢাকা দিয়ে থাকে জানিয়ে র্যাব অধিনায়ক বলেন, “এরপর তাদের বিরুদ্ধে মামলা এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে কিছুদিনের মধ্যে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। এখানে তিনি প্রথমে যাত্রাবাড়ী পরে খিলগাঁও, উত্তরা, মহাখালীসহ বিভিন্ন জায়গায় স্থান পরিবর্তন করে বসবাস করেন।”
র্যাবের এই কর্মকতা আরও বলেন, “গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে তিনি বিভিন্ন সময় বাসা পরিবর্তন করে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় বসবাস শুরু করেন। ২০২১ সাল থেকে তিনি তেজগাঁও এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন এবং সেখান থেকেই গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পলাতক অবস্থায় তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভিডিও এডিটিংসহ বিভিন্ন সফট্ওয়্যারভিত্তিক কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন।”
