• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সরকারি কর্মকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে ১০ বিয়ে ও অর্থ আত্মসাৎ


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২২, ০১:৫৪ পিএম
সরকারি কর্মকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে ১০ বিয়ে ও অর্থ আত্মসাৎ

মো. মামুন ইসলাম। পেশায় গ্রিল ওয়ার্কশপের কর্মচারী হলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি একজন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। আবার কখনো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সহকারী উপসচিব, কখনো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কখনো ব্যাংক কর্মকর্তা, আবার কখনো ইঞ্জিনিয়ার। নিজেকে উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন নারী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে সুবিধাজনক স্থানে বদলি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে বিদেশ গমনসহ নানা সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে অর্থ আত্মসাৎ করতেন।

বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির বিশেষ পুলিশ সুপার এস এম আশরাফুল আলম এসব তথ্য জানান।

এস এম আশরাফুল আলম জানান, নিজের আসল পরিচয় গোপন করে সব তথ্য অবিকৃত রেখে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করতেন মামুন। তার বেশি আগ্রহ বিভিন্ন বয়সী নারীদের প্রতি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে তার শরীরের অবয়বের সঙ্গে মিলে যায়, এমন শারীরিক গঠনের মুখে মাস্ক পরিহিত কিংবা মুখাবয়ব স্পষ্ট বোঝা যায় না এমন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সময়ের ছবি নিজের ছবি হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন মেয়েদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করতেন। সম্পর্কের একপর্যায়ে তিনি ভুক্তভোগী মেয়েদের বিয়ের প্রস্তাব দিতেন। যদি কোনো ভুক্তভোগী তার বিয়ের প্রস্তাবে সাড়া না দিত, তাহলে মামুন আত্মহত্যা করবে মর্মে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল করে মেয়েদের বিয়েতে রাজি করাতেন। পরে বিয়ের ফাঁদে ফেলে ভুক্তভোগী মেয়েদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করতেন।

এভাবে এক ভিকটিমের সঙ্গে প্রতারক মামুনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সময় তিনি নিজেকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দেন। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যকার সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হয়। প্রতারক মামুন কখনো ভিকটিমের সঙ্গে সরাসরি দেখা করতেন না। বিভিন্ন সরকারি কাজে খুবই ব্যস্ত আছেন, অথবা তার ছুটি হচ্ছে না—এ রকম বিভিন্ন অজুহাত তৈরি করে সরাসরি বিয়েতে আসতে পারছে না বলে মামুন ভুক্তভোগী নারীর নামে কাজী অফিসের সিলমোহরযুক্ত ভুয়া নিকাহনামা প্রস্তুত করে কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দিতেন। মেয়েটিকে ওই কাবিননামায় স্বাক্ষর করে মামুন ইসলামের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিতে বলতেন।

ভুক্তভোগী নারী সরল বিশ্বাসে মামুনের কথামতো কাজ করার কিছুদিন পর তিনি ওই নারীর বাসায় যেতেন ও কিছুদিন একসঙ্গে বসবাস করতেন।

ভুয়া বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর মামুন মেয়েটিকে আপত্তিকর ও অশালীন অবস্থায় ভিডিও কলে আসতে বলতেন। আপত্তিকর অবস্থায় মেয়েটির সঙ্গে ভিডিও কলে কথোপকথনের সময় ভিকটিম মেয়েটির অগোচরে প্রতারক মামুন আপত্তিকর অবস্থার ভিডিও কলের স্ক্রিন রেকর্ড করে সেই ভিডিওগুলো নিজ মোবাইলে সংরক্ষণ করে রাখতেন। পরে ওই ভিডিওগুলো অনলাইনে ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করতেন।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, মামুনের প্রতারণার শিকার একা নারী ডিএমপির পল্টন থানায় তার বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। এরপর সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের সাইবার ইনভেস্টিগেশন ও অপারেশনস টিম মামলাটির তদন্ত ভার পাওয়ার পর মামুনকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার কার্যক্রম শুরু করে।

পরে সিআইডির সাইবার পুলিশের দল মামুনকে দিনাজপুর জেলার খানসামা থানাধীন আমতলী বাজার থেকে বুধবার (৩১ আগস্ট) গ্রেপ্তার করে।

এ সময় তার কাছ থেকে ৫টি নকল নিকাহনামা, মো. মামুন ইসলাম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বদলির ভুয়া অফিস আদেশের কপি ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ২টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তার আসামির বরাত দিয়ে সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতারক মামুনের আসল নাম মো. মমিনুল ইসলাম। তিনি বিভিন্ন সময় নিজেকে উচ্চপদস্থ বিভিন্ন পদের সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রতারণামূলক প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে প্রায় ১০ জন মেয়েকে বিয়ে করেন এবং তাদের কাছ থেকে ব্ল্যাকমেলিংয়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন। প্রতারক মামুনের মোবাইল ডিভাইসে পঞ্চাশের অধিক মেয়ের সঙ্গে ভিডিও কলে কথোপকথন ও অসংখ্য ন্যুড ভিডিও পাওয়া গেছে।

Link copied!