দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশ দিয়ে যানবাহন চলাচলকারী প্রথম টানেল নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশের কর্ণফুলী নদীতে। সরকারের মেগাপ্রকল্পগুলোর অন্যতম এই টানেলের নাম বঙ্গবন্ধু টানেল।
গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন সংযোগ হিসেবে নির্মিত ও গেল বছরে উদ্বোধন করা টানেলটি বর্তমানে ‘সাদা হাতিতে’ পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে সাড়ে ২৬ লাখ টাকা করে।
প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজারের বেশি যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বর্তমানে টানেল দিয়ে দিনে গড়ে প্রায় ৪ হাজার গড়ি চলাচল করছে। এতে ব্যয়ের চেয়ে আয় একেবারেই কমে যাওয়ায় আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
কর্তৃপক্ষের হিসাবের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে দেখানো হয়, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর উদ্বোধনের পর থেকে ২০২৪ সালের ১১ অক্টোবর পর্যন্ত টানেল দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার ৯৩৪টি গাড়ি চলাচল করেছে। এসব গাড়ি থেকে দৈনিক টোল আদায় হয়েছে গড়ে প্রায় ১০ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
অথচ টানেলের টোল আদায় কার্যক্রম পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক কাজে প্রতিদিন ব্যয় হচ্ছে গড়ে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা করে। প্রতিদিনের ব্যয়ের বিপরীতে টোল আদায় থেকে উঠে আসছে মাত্র ৩০ শতাংশ।
সেই হিসাবে উদ্বোধনের পর থেকে এখন পর্যন্ত ব্যয়ের তুলনায় টোল আদায় থেকে ৯০ কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে। আর দৈনিক লোকসান হচ্ছে ২৬ দশমিক ৫০ লাখ টাকার বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টানেলটি চালু হওয়ার এক বছর পর বর্তমানে এর মধ্য দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২০ শতাংশ। এর পেছনে মূল কারণ উল্লেখ করে তারা বলছেন, টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে প্রত্যাশিত শিল্প উন্নয়ন এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।
টানেল নির্মাণের আগের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২৫ সাল নাগাদ ২৮ হাজার ৩০৫টি ও ২০৩০ সাল নাগাদ ৩৭ হাজার ৯৪৬টি যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে আগামী ২০২৫ সালে টানেল দিয়ে ৫ হাজার গাড়িও চলাচল করবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রামের নাগরিকরা।
বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, ১০ হাজার ৬৯০ কোটি টাকায় নির্মিত টানেল প্রকল্পটি কেবল উচ্চাভিলাষীই নয়, বরং অদূরদর্শিতার প্রতিফলনও। টানেল নির্মাণের পর রক্ষণাবেক্ষণ করতে গিয়ে কেমন খরচ হবে, তা নিয়ে কোনো অভিজ্ঞতাই ছিলো না সংশ্লিষ্টদের। দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রভাব পুরোপুরি বিবেচনা না করেই শুধু ‘স্ট্যাটাস সিম্বলের’ জন্য এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, “চট্টগ্রাম থেকে টানেল পার হয়ে আমরা আনোয়ারা প্রান্তে কেন যাব, সেটিই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আনোয়ারা, বাঁশখালীসহ সাগর উপকূলে শিল্পকারখানা গড়ে তোলার যে পরিল্পনা করা হচ্ছে, সেটি কত বছরের মধ্যে তার কোনো টাইম লাইন নেই।”