বৈশাখ মাস চলছে, অথচ কালবৈশাখীর তাণ্ডব নেই- এমন ঘটনা বিরল। আর সেই ঘটনাই দেখতে হচ্ছে এবারের বৈশাখ মাসে। এপ্রিলের মধ্যভাগে শুরু হওয়া বৈশাখ মাসের প্রায় অর্ধেকটা পার হয়েছে। অথচ এখনও দেখা মেলেনি কালবৈশাখীর রুদ্ররূপের বা বজ্রঝড়ের।
অতীতের তথ্য পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বৈশাখ মাস শুরুই হয় সাধারণত কালবৈশাখী বা বজ্রঝড় দিয়ে। গত ১৪ এপ্রিল ছিল বৈশাখের প্রথমদিন। শনিবার (২৭ এপ্রিল) বৈশাখ মাসের ১৪তম দিন। গত ১৪ দিনে দেশে মাত্র একটি কালবৈশাখী হয়েছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে। তবে সে ঝড়ের সঙ্গে কালবৈশাখীর অনেক ফারাক ছিল।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে, মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত যেসব বজ্রঝড় হয় সেগুলো কালবৈশাখী। উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা বায়ুর কারণে এই ঝড়বৃষ্টি হয়। ১৯৮১ সাল থেকে চলতি ২০২৪ সাল পর্যন্ত চার দশকের বেশি সময়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কালবৈশাখী ঝড়ের আচরণ বদলে গেছে। যা অস্বাভাবিক।
সাধারণত, এপ্রিল মাসে প্রচণ্ড গরম হয়। কখনও কখনও দাবদাহ চলে। তবে এক সময় বজ্রঝড় হয়ে সেই দাবদাহ প্রশমিত হয়। আবারও যখন আবহাওয়া চরম গরম হয়ে পড়ে তখন বৃষ্টি বা বজ্রঝড়ের মাধ্যমে তা প্রশমিত হয়। তবে গত কয়েক বছর ধরে প্রকৃতির এই স্বাভাবিক আচরণ বদলে গেছে। কমছে কালবৈশাখী, বাড়ছে টানা তাপপ্রবাহ।
সূত্রমতে, চলতি এপ্রিল মাসে ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙে টানা ২৭ দিন ধরে তাপপ্রবাহ চলছে। যা শুরু হয়েছে এপ্রিলের প্রথম দিন থেকে। এখনও অব্যাহত রয়েছে। চলবে আরও কয়েকদিন। আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ১৯৪৮ সালের পর থেকে তথ্য উপাত্ত ঘেঁটে নিশ্চিত হয়েছেন, এবারের মতো টানা তাপপ্রবাহ আগে আর কখনই হয়নি। আর এই সময়ের মধ্যে দেখা মেলেনি কালবৈশাখীর।
১৯৮১ সাল থেকে চলতি এপ্রিল মাস পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ৪৩ বছরে এপ্রিল মাসে বড় আকারের বজ্রঝড় হয়েছে ৩৬৫টি। সবচেয়ে বেশি হয়েছিল ১৯৯৭ সালের এপ্রিল মাসে, ১৪টি। ১৯৯৯ ও ২০০৯ সালে এপ্রিলে ঝড় হয়েছে চারটি করে। ২০২১ সালে আটটি, পরের বছর নয়টি আর গেল বছরের এপ্রিলে হয়েছে সাতটি। চলতি বছরে সেই সংখ্যা মাত্র একটি।
তবে চলতি এপ্রিলের ৭ তারিখে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাটের বিভিন্ন স্থানে যে কালবৈশাখী বয়ে যায় তাতে বজ্রপাত ঘটে। এতে বাগেরহাটে একজনের মৃত্যুও হয়। দক্ষিণ জনপদের মানুষের কাছে এই কালবৈশাখী ঝড় একেবারেই অস্বাভাবিক ছিল।
এপ্রিলে কালবৈশাখী কমে যাওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞরা দায়ি করছেন অস্বাভাবিক তাপপ্রবাহকে। টানা ও অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের কারণে জলীয় বাষ্পের সঙ্গে আর্দ্রতার মেলবন্ধন ঘটছে না। ফলে বজ্রঝড় ঘটানোর জন্য প্রয়োজনীয় বজ্রমেঘের জোগান হচ্ছে না। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে যে মাত্রাতিরিক্ত তাপপ্রবাহ তার কারণেই প্রকৃতির অস্বাভাবিক আচরণ বাড়ছে। সেই সঙ্গে বিদায় নিতে বসেছে কালবৈশাখী ঝড়।