• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
মোল্লাবাড়ি বস্তিতে আগুন

সব হারিয়ে নিঃস্ব এখন কয়েক শ’ মানুষ


বিজন কুমার
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৩, ২০২৪, ০৫:৫১ পিএম
সব হারিয়ে নিঃস্ব এখন কয়েক শ’ মানুষ
পুড়ে যাওয়া ছাইভস্মের নিচে ফেলে যাওয়া কিছু একটা খুঁজছেনএক নারী। ছবি-সংবাদ প্রকাশ

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের মোল্লাবাড়ি বস্তিতে সংঘটিত আগুনে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে কয়েক শ’ দরিদ্র পরিবার। তীব্র শীতের কনকনে বাতাসে খোলা আকাশের নিচে দিন পার করছেন পুড়ে যাওয়া বস্তির কয়েকশ’ মানুষ।

শনিবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল ১১ টায় দেখা যায় এসব দুর্গত মানুষের দুর্বিষহ জীবনের চিত্র।

শীতের হিমেল হাওয়ায় জবুথুবু অবস্থা এসব মানুষদের। বাতাসে ভেসে আসছে পোড়া বস্তির গন্ধ।

জানা গেছে, গতকাল রাত ২ টায় অনাকাঙ্ক্ষিত এক অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে তাদের বস্তির ৩শ’ ঘর। এরপর থেকেই তাদের জীবনে নেমে এসেছে অন্ধকার। দিনমজুর, হতদরিদ্র শ্রেণির এসব মানুষেরা আগুনে সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব।

বস্তির ভেতরে প্রবেশের ছোট রাস্তা ধরে এগুতেই দেখা গেল, ছোট বাচ্চার একটি জ্যাকেট বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন একজন বৃদ্ধা নারী। জানা গেল তার নাম রাবেয়া।

পঞ্চাশর্ধ বয়সী রাবেয়া পানি ছল-ছল চোখ আর চাপা কণ্ঠে হাঁফাতে হাঁফাতে বলতে শুরু করলেন, “গতকাল রাইতে আমার মেয়ের নাতনি টা আগুনে পুইড়া (পুড়ে) মইরা (মৃত্যু) গেছে।  তার লাশ পুলিশে লইয়া গেছে।  খুঁইজা পাইতাছে না এখনো।  আমি নিজেও ক্যানসারের রোগী। আমার কাগজপত্র সব পুইড়া গেছে। মাইয়ার নাতনিটা আমারে বড় আম্মা কইয়া ডাকে। কাইল আইয়া ছোড (ছোট) মাইয়াটা আমার বাড়িত এই কাপড় (জ্যাকেট) রাইখা গেছে। হেই লইয়া আছি। আমার মাইয়াটার একটা পোলাও মইরা গেছে।”

শুধু রাবেয়া নয়। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্থদের সবার কথা প্রায় একই রকম। কেউ হারিয়েছেন স্বজন।  কেউ হারিয়েছেন সম্পদ। আবার কেউ হারিয়েছেন জীবিকার নির্বাহের শেষ অবলম্বনটুকু।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গোটা বস্তি এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।  ভুক্তভোগীরা শুধু নিজের বাড়ির স্থানটুকু ছাড়া কোনো কিছুর অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছেন না। দুর্গত এসব মানুষদের প্রতিদিনের সকাল নতুন নতুন আশা নিয়ে শুরু হলেও, আজকের সকালটা ছিল বিষাদের। সর্বনাশা আগুন সব আশাই বিলীন করেছে তাদের।

পুড়ে যাওয়া বস্তিতে দাঁড়িয়ে এক  ভাগ্যাহত মা ও শিশু। ছবি-সংবাদ প্রকাশ

পোড়া বস্তির ছাইভস্মের নিচে পারুল নামের এক বৃদ্ধা খুঁনতি দিয়ে খুঁড়ে কিছু একটা খুঁজছেন। এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, “আমি মাছের আঁশ কুড়াই আর মাছ কাটি।  সেই টাকা দিয়া আমার সংসার চলে। কিন্তু সেই মাছ কাটা বড় বটি আজকে আর পাই না। সোনার জিনিস কিছু কিনছিলাম। সোনার জিনিসগুলো খুঁজতেছি। এখানে আমার ঘর ছিল। কিছুই পাই না আজকে। রাইতে আগুন লাগার পর কোনোমতে বের হইছি। তারপর থাইক্যা (থেকে) রাস্তায়। কিছুই নাই আর।”

রেহানা নামের আরেক নারী বলেন, “পলিব্যাগ বিক্রি করে সংসার চালাই। এখন কি বিক্রি করমু (করবো) সেই চিন্তায় শেষ। কাইল রাইতে আগুন লাগছিল বিক্রি করার পলিব্যাগ, টাকা পয়সা সব পুইড়া গেছে। কিছুই নাই। দুপুর হইয়া আইতাছে। কিছু খাই নাই এখনো। কই থাকমু আইজ। চলার শেষ সম্বল পুইড়া গেছে।”

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “রাত রাত ২টা ২৩ মিনিটে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এতে ১৩টি ইউনিট কাজ করেছে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের চেষ্টায় ৩টা ৪০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।  এ ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকজনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে আগুনের সূত্রপাত কোথা থেকে, তাৎক্ষণিকভাবে তা জানাতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা।”

Link copied!