• ঢাকা
  • সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সাহিত্যপ্রেমীদের তীর্থক্ষেত্র নীলক্ষেত


বিজন কুমার
প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৩, ০৩:৫০ পিএম
সাহিত্যপ্রেমীদের তীর্থক্ষেত্র নীলক্ষেত

রাজধানীর নীলক্ষেত মোড় এলাকা। এই মোড়ে দাঁড়ালেই চোখে পড়বে ফুটপাতে অনেক বইয়ের দোকান। সবচেয়ে অবাক করার বিষয়, এখানে শ্রেণিকক্ষের নির্ধারিত সিলেবাসে ঘেরা বইগুলো মেলে না। মেলে সাহিত্যিবিষয়ক বই। আর এসব বই ক্রেতারা পেয়ে থাকেন অনেক সুলভ মূল্যে। আরও কিছু সুবিধা তো রয়েছেই।

রোববার (৩০ জুলাই) সকাল তখন সাড়ে ৯টা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল, কিছু দোকানি তাদের বইয়ের পসরা সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। কেউ আবার নিজের দোকান সাজিয়ে ফেলেছেন। সাজানো বইয়ে পলক পড়তেই দেখা মিললো, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, উইলিয়াম শেক্সপিয়ারসহ তাবড় তাবড় সব লেখকের বই। দামও ক্রয়সীমার মধ্যেই। বই ব্যবসায়ীরা জানালেন, এসব বই তারা সংগ্রহ করেন বিভিন্ন এলাকার বাসা বাড়ি থেকে। আবার কিছু সংগ্রহ করা হয় প্রকাশনী থেকে।

এই ফুটপাথ মার্কেটের পাশেই রয়েছে একাডেমিক বইয়ের বিশাল মার্কেট। তবু সাহিত্যপ্রেমিদের তৃষ্ণা মিটিয়ে যাচ্ছে পুরোনো বইয়ের সংগ্রহের এ মার্কেটটি।

দেখা মিললো মুহিদ নামের এক সাহিত্যপ্রেমীর। বইয়ের দোকানে দাঁড়িয়ে নিমাই ভট্টাচার্যের লেখা ‘মেম সাহেব’ বই পড়ছেন। কথা হলে তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমি ২০১৮ সালে ঢাকায় আসি। আগে থেকেই বাংলা সাহিত্য পড়ার অভ্যাস। ঢাকায় এসে এই বইয়ের মার্কেট সম্পর্কে জানতে পারি। এখানে বাংলা সাহিত্যের সব বই মোটামুটি পাওয়া যায়। সবচেয়ে বেশি যেটা ভালো লাগে তা হলো কম দামে পাওয়া যায়।”

শুধু মুহিদ নয়, তার মতো অনেক সাহিত্যপ্রেমীর তীর্থক্ষেত্র যেন  নীলক্ষেত এলাকাটি। যারা অনেকেই এই বাজারটি সম্প্রসারণ করার দাবি জানিয়েছেন। আর ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, অনলাইন কেন্দ্রিক বইয়ের বাজারে কমেছে তাদের ব্যবসা। অভিযোগের তীর রয়েছে কাগজের মূল্য বৃদ্ধির দিকেও।

মোস্তাফিজুর রহমান নামে একজন বলেন, “এই বইয়ের বাজার আমি ৫ বছর ধরে  চিনি। এখানে বই কিনতে হলে একটু দরদাম করে কিনতে হয়।”

শুভঙ্কর কুমার নামের এক ক্রেতা বলেন, এখানে এলে অবাক লাগে বইগুলোর দাম কম। আর লাইব্রেরিতেও অনেক সময় কিছু বই পাওয়া যায় না। এখানে এলে মিলে যায় বইগুলো। বিষয়টা বেশ মজার। এখানে সিলেবাসের বই না মিললেও সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য তীর্থক্ষেত্র বলা যায়। তবে এখানে দরকষাকষি করাটা জরুরি।”

নূর মোহাম্মদ নামের এক বই ব্যবসায়ী বলেন, “আমি অনেক বছর ধরেই বই ব্যবসায়ের জড়িত। রোদের মধ্যেই বই বিক্রি করি। আগের মত আর ব্যবসা নাই। আগে ব্যবসা ভালো হইতো। এখন তো মানুষ ইন্টারনেটে বই পড়ে। এখন বইয়ের দামও বাড়ছে। আগে সারাদিনে যদি ৫ হাজার টাকা বিক্রি করতাম। তাহলে অর্ধেকের বেশি লাভ থাকত। আর এখন ১৫ হাজার টাকা বিক্রি করলে ২ হাজার টাকা লাভ ওঠা কষ্টকর।”

মোহাম্মদ শাওন নামে এক বই বিক্রেতা বলেন, “আমি ২০ বছর থেকে বইয়ের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এখন ব্যবসা বাড়তেছে না। বরং, কমে যাচ্ছে। আমরা এখানে অনেক ধরনের সুবিধা দেই কাস্টমারদের। পাঠকরা কম দামে বই কিনতে পারে।” 

Link copied!