বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সামাজিক কাজে অংশগ্রহণের জন্য ৪০ হাজার ৫০০ টাকা অনুদান দেওয়া হয়। কিন্তু অডিট রিপোর্টে ওই টাকার কোনো তথ্য না পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান কিশোর কুমারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
বুধবার (১৭ মে) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. হায়দার তানভীরুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সাবিহা রহমান নিতু নামের এক গৃহিণীর পক্ষে গত ১৬ মে নোটিশটি পাঠানো হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, আপনি নোটিশ গ্রহীতা (কিশোর কুমার) বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বিদ্যানন্দ ফউন্ডেশনের চেয়ারম্যান। প্রতিষ্ঠানটি অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সামাজিক দাতব্যমূলক কাজ করে আসছে। আপনি সংগঠনের বিভিন্ন সামাজিক কাজের ছবি ও ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে থাকেন। যার ফলে সাধারণ মানুষ আপনার প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সময়ে অর্থ প্রদান করে থাকেন। নোটিশদাতা (সাবিহা রহমান নিতু) আপনার সংগঠনে সামাজিক কাজে অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্যে ২০২২ সালের ২০ মার্চ রাত ১১টা ২২ মিনিটে তার স্বামীর ব্র্যাক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ফাউন্ডেশনের অ্যাকাউন্টে ৩৮ হাজার টাকা প্রদান করেন। এ ছাড়া নোটিশকারী তার বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে ২০২০ সালের ৭ জুলাই ও ১১ আগস্ট এবং ২০২১ সালের ৫ মে আপনার ফাউন্ডেশনে বিকাশের মাধ্যমে ২ হাজার ৫০০ টাকাসহ সর্বমোট ৪০ হাজার ৫০০ টাকা প্রদান করেন। বিগত কিছুদিন যাবৎ বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এবং সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে কিছু অভিযোগ উপস্থাপিত হয়েছে। যেখানে ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম এবং টাকার সঠিক ব্যবহার না করার অভিযোগ এসেছে। কিন্তু সেসব বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির অডিট রিপোর্টে ফাউন্ডেশনের সব ব্যয়ের খাত স্পষ্টভাবে উল্লেখ রাখা হয়। কিন্তু আমার মোয়াক্কেল (সাবিহা রহমান নিতু) আপনাদের (ফাউন্ডেশনের) অডিট রিপোর্ট চেক করার পরেও তার প্রেরিত অর্থের কোনো তথ্য পাননি এবং তার অর্থ কোন খাতে ব্যয় করা হয়েছে, সেটি বারবার আপনার প্রতিষ্ঠানের কাছে জানতে চাওয়া সত্ত্বেও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। যেহেতু প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নোটিশকারী (সাবিহা রহমান নিতু) তার পাঠানো টাকার কোনো সঠিক তথ্য পাননি, তাই এই আইনি নোটিশ প্রাপ্তির পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে আমার মোয়াক্কেলের (সাবিহা রহমান নিতু) পাঠানো সব অর্থ কোন খাতে ব্যয় করা হয়েছে, তার সঠিক ব্যাখ্যা দেবেন। অন্যথায় আপনার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যার সব দায়ভার ফাউন্ডেশনের ওপর বর্তাবে।
এর আগে, রাজধানীর বঙ্গবাজারের পোড়া কাপড় দিয়ে তৈরি অলংকারের ছবিসহ ‘মজিদ চাচা’ ও গরুর ছবি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনকে নিয়ে। প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়েও কেউ কেউ অভিযোগ কিংবা সমালোচনা করছেন।
এসব সমালোচনা নিয়ে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান কিশোর কুমার দাস নিজের বক্তব্য দিয়েছেন। গত ১৮ এপ্রিল রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের লাইভে এসে বিদ্যানন্দের বিরুদ্ধে ওঠা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন কিশোর কুমার দাস।
কিশোর কুমার দাস বলেন, “বিদ্যানন্দের সমালোচনা যারা করছেন তারা আসলে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই করছেন। তারা মনে করছেন বিদ্যানন্দের ভুল হলে এতে দেশের ক্ষতি হতে পারে। তবে কেউ যদি মনে করেন বিদ্যানন্দের কাছে স্বচ্ছতা নেই তাহলে যে কেউ মামলা করতে পারেন। এর আগে অনেকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছে এবং সেগুলোর জবাবও দেওয়া হয়েছে।”
বিদ্যানন্দের অডিট প্রতিবেদন নিয়ে তিনি বলেন, “যাদের মনে বিদ্যানন্দের অডিট প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন জাগছে তারা কষ্ট করে অডিট ফার্মের কাছ থেকে তথ্য নেন। বিদ্যানন্দ ব্যক্তিগতভাবে কারো কাছ থেকে টাকা নেয় না। অডিট ফার্ম ব্যাংক থেকে হিসাব নিয়ে অডিট করে। তাদের বিভিন্ন ভাউচার দিতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী ট্যাক্স, ভ্যাট সব পরিশোধ করা হচ্ছে।”