জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম ও টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মীম।
সোমবার (১৮ মার্চ) বিকেলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম ও টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষক আবু সাহেদ ইমন ও বিভাগের চেয়ারম্যান জুনায়েদ আহমেদ হালিমের বিরুদ্ধে তিনি এই অভিযোগ করেন।
ডিবি কার্যালয়ে অভিযোগ দেওয়ার পর মীম সাংবাদিকদের বলেন, “আমার বিভাগের শিক্ষক আবু সাহেদ ইমন আমাকে যৌন হেনস্তা করে। এই অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে বিভাগের চেয়ারম্যান ও অভিযুক্ত শিক্ষক আমাকে সেটি তুলে নিতে নানাভাবে চাপ দিতে থাকে। এতে আমি রাজি না হওয়ায় তারা আমকে হাত-পা কেটে হত্যা করাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন। আমাকে একঘরে করে দেওয়া হয়। আমাকে বিভিন্ন পরীক্ষায় শূন্য শূন্য নম্বর দিয়ে ফেল করানো হয়। আমার অনার্সের ফাইনাল ভাইভায় আমাকে ফেল করানো হয়।”
মীম বলেন, “আমাকে একঘরে করে দেওয়া হয়েছে। আমি স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছি না। কখন আমাকে মেরে ফেলা হয়, সেটা জানি না। শুধু আমি না, তারা আমার পরিবারকেও নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে এবং হেনস্তা করছে। বর্তমান এই অবস্থা থেকে বাঁচতে ডিবি কার্যালয়ে অভিযোগ নিয়ে এসেছি।”
অভিযোগে মীম উল্লেখ করেন, ২০২১ সালে আবু সাহেদ ইমন তাকে যৌন হেনস্তা করেন। তারপর অভিযোগ দেওয়া হলে তার জীবনে নেমে আসে নানা নির্যাতনের খড়্গ। সম্প্রতি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় যৌন হয়রানি ও নানা নিপীড়ণের বিরুদ্ধে এই শিক্ষার্থী সোচ্চার হোন। সেখানেই অবন্তিকার ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে নিজের প্রসঙ্গও আসে। গণমাধ্যমে নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেন। তারপর থেকে আবার তাকে হত্যাসহ বহিষ্কারের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
অভিযোগ তুলে নেওয়া, পরীক্ষায় শূন্য নম্বর দেওয়া ও মৌখিক পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার বিষয়ে ফিল্ম ও টেলিভিশন বিভাগের সভাপতি জুনায়েদ আহমেদ হালিম বলেন, “এটা বায়বীয় অভিযোগ। সে পরীক্ষায় অংশই নেয়নি এবং ভাইভায় একটি প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারেনি। তাই সে ফেল করেছে। এর আগেও বিভিন্ন টিচারের কোর্সে সে ফেল করেছে।”
আবু সাহেদ ইমনের মাধ্যমে যৌন হয়রানির বিষয়ে তিনি বলেন, “এই বিষয়টি আদালতে গড়িয়েছে। আদালতই সিদ্ধান্ত নেবে। তাই আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।”
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আবু সাহেদ ইমন বলেন, “ঠিক আছে, ডিবি তাকে নিরাপত্তা দিক! আমরা দোয়া করি, সে নিরাপত্তা পাক। সে অনিরাপত্তায় থাকবে, শিক্ষক হিসেবে এমন কোনো কাজ করিনি। সে মিথ্যা একটা ঘটনাকে অবন্তিকার মর্মান্তিক মৃত্যুর আবেগে কাজে লাগাতে চাচ্ছে।”
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ বলেন, “আমরা মীমের অভিযোগ পেয়েছি। তার নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা নিশ্চিতের চেষ্টা করব। তাকে হুমকি-ধমকি দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখবে আমাদের সাইবার টিম।”