পাঁচ শিশু দুই দলে ভাগ হয়ে ঝগড়া করছে। এক শিশুর হাতে দেখা যায় ব্লেডের ভাঙা অংশ। এদের সবার বয়স ৮ থেকে ১০ বছর। কিছুক্ষণ বাদেই চোখে পড়ে- এরা সবাই পলিথিনে আঠা ভরে নেশা করছে। বুঝতে বাকি রইলো না, তারা ড্যান্ডিতে আসক্ত। এই চিত্র দেখা গেলো বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় রাজধানীর সদরঘাটে।
শুধু সদরঘাট নয়, পার্ক, ফুট ওভারব্রীজ, রেল স্টেশনসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন দেখা যায় ছিন্নমূল এসব শিশুদের। এদের হাতে ব্লেডের ভাঙা অংশ দেখে অনুমাণ করা যায়, অপরাধমূলক কাজেও জড়াতে পারে এই শিশুরা।
ড্যান্ডি এক প্রকার গ্লু গাম বা আঠা জাতীয় পদার্থ। সাধারণত এসব আঠা জুতা তৈরির কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। যা খোলা স্থানে রাখলে খুব সহজেই বাষ্পে পরিণত হয়।
সদরঘাট এলাকায় এসব শিশুদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা এসব আঠা স্থানীয় হার্ডওয়্যারের দোকান থেকে সংগ্রহ করে।
স্থানীয়রা বলছেন, তারা অনেকেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। সরকারি উদ্যোগই পারে এদের আলোর পথে ফেরাতে।
অপরদিকে সমাজসেবা অধিদপ্তর বলছে, “আগের চেয়ে কমে এসেছে এসব পথশিশুর সংখ্যা।”
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় ঝগড়ায় জড়ানো মিথুনের (ছদ্মনাম) সঙ্গে। এটা সেবন করলে কি উপকার হয়, তা জানা নেই তার। তবে সেবনের পর অনুভূতি কেমন হয়, তা সে বর্ণনা করতে পারে। সে বলে, “এই আঠার দাম ১২০ টাকা। এগুলো পলিথিনে ভরে শুকলে মাথা ঝিনঝিন করে, মাথা ঘোরায়, তখন খুব ভালো লাগে।”
এরশাদ (ছদ্মনাম) নামে এক কিশোর এলোমেলো বাক্যে বললো, “এখানে অনেক গোণ্ডগোল হচ্ছে, দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু আমরা নিরিবিলি, এমন মনে হচ্ছে। আমি প্রেম করে ছ্যাঁকা খাওয়ার পর ধরছি এই নেশা। তা প্রায় ৭ বছর ধরে খাই। এটা খাইতে ভালোই লাগে। বড় হয়ে বিয়ে করলে ছেড়ে দিবো এই নেশা। মাঝে মাঝে ছেড়ে দেই, আবার ধরি। এটা আমার খুশি।”
আফরোজা (ছদ্মনাম) নামের এক মেয়ে বলে, “আমার আম্মুর কারণে আমি নষ্ট হয়ে গেছি। জোড়াব্রিজ থেকে এসব কিনে এনে খাই। মনটাতে অনেক কষ্ট লাগে। আমি যদি কোনো ভালো পরিবেশ পাই, ভাই তাহলে ছেড়ে দিতে পারবো। না হলে আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
স্থানীয় সরল খাঁ নামের এক বৃদ্ধ বলেন, “এরা পরিবার থেকে অনেকেই বিচ্ছিন্ন। কারও বাবা, অথবা কারও মা বিয়ে করছে। এজন্য দেখা যায়, তারা এগুলোতে (নেশায়) চলে আসে। সরকার যদি এদের ব্যবস্থা করতে পারে, তাহলে এরা মানুষ হবে। না হলে সম্ভব নয়।”
ঢাকা বিভাগীয় সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. মোজ্জামেল হক বলেন, “২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়ন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হতে চাই। এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে কাউকে পিছিয়ে রেখে তা করা যাবে না। কাজেই যেসব শিশুরা এখনো রাস্তায় রয়েছে, তাদের নিয়ে সরকার এবং সরকারের অধীনে আমরা সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতায় কাজ করছি। যে কারণে পথশিশুর সংখ্যা আগের চেয়ে এখন কমে এসেছে। বিদেশি সংস্থার সঙ্গে আমরা কাজ করছি। সরকারের কিছু নিজস্ব পলিসি রয়েছে। ভবিষ্যতে এসব পথশিশুর সংখ্যা আরও কমে আসবে।