সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানের সঙ্গে মডেল ও উদ্যোক্তা মেঘনা আলমের পরিচয় হয়েছিল আট মাস আগে। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে সখ্য। মেঘনার ফ্ল্যাটেও মাঝেমধ্যে যেতেন এই সৌদি কর্মকর্তা। মেঘনার পরিবারের দাবি, পরিচয়ের মাত্র চার মাস পর গত বছরের ডিসেম্বরে গোপনে তাদের বাগ্দানও সম্পন্ন হয়। তবে এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি তারা।
কারাগারে থাকা মেঘনার বাবা বদরুল আলমের সঙ্গে কথা বলেছে একটি গণমাধ্যম। তিনি বলেন, মেঘনার সঙ্গে রাষ্ট্রদূত ঈসার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা। গত বছরের আগস্টে ঢাকায় সৌদি দূতাবাস আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রথম দেখা হয় তাদের। সেখান থেকে বন্ধুত্বের শুরু। মেঘনার ‘মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’ নামে সামাজিক উদ্যোগে সহযোগিতাও করেন রাষ্ট্রদূত।
বদরুল আলম জানান, পরিচয়ের চার মাসের মাথায় ডিসেম্বরের এক সকালে মেঘনা পরিবারকে জানায়, পরদিন তাদের বাগ্দান হবে। মেঘনার পরিবারে তখন বিয়ের প্রস্তুতির আমেজ। কিন্তু বাগদানের কিছুদিন পরই রাষ্ট্রদূতের স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে বলে মেঘনা জানতে পারেন।
পরিবারের দাবি, এরপর থেকেই রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মেঘনার দূরত্ব বাড়তে থাকে। তিনি মেঘনার সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেন। একপর্যায়ে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। মেঘনা তখন নিজের ক্ষোভ জানাতে চান।

তার বাবা বলেন, তার মেয়ে চেয়েছিলেন, রাষ্ট্রদূত শুধু দুঃখ প্রকাশ করুন। কিন্তু সেই আশ্বাস না পেয়ে সিদ্ধান্ত নেন, বিষয়টি প্রকাশ্যে আনবেন।
পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা একটি গণমাধ্যমকে বলেন, এই শঙ্কা থেকেই রাষ্ট্রদূত মেঘনার বিরুদ্ধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগে বলা হয়, একজন নারী তার কাছ থেকে ‘আর্থিক সুবিধা নেওয়ার জন্য’ সম্পর্ককে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন এবং হুমকি দিচ্ছেন। মন্ত্রণালয় বিষয়টি ‘অধিক গুরুত্ব’ দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানায়। বিষয়টি তদারকির দায়িত্ব পালন করেন একজন বিশেষ সহকারী। তিনিই ডিবি পুলিশকে ঘটনাটি জানান।
৯ এপ্রিল রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে মেঘনা ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, ‘পুলিশ পরিচয়ে কিছু লোক’ তার বাসার দরজা ভাঙার চেষ্টা করছেন। পরদিন তাকে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটকের কথা জানায় ডিএমপি। ১০ এপ্রিল পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে আদালত বিশেষ ক্ষমতা আইনে মেঘনাকে ৩০ দিনের আটকাদেশ দেন। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী।

মডেল মেঘনাকে আটকের দিনই ঢাকা ছাড়েন সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসামডেল মেঘনাকে আটকের দিনই ঢাকা ছাড়েন সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা
এদিকে মেঘনাকে গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার বিকেলে মেঘনার পরিচিত ব্যবসায়ী মো. দেওয়ান সমীরকে (৫৮) গ্রেপ্তার করা হয়। দেওয়ান সমীর ‘কাউলি গ্রুপের’ নির্বাহী হিসেবে কর্মরত। এই গ্রুপের ভিসা প্রসেসিং সেন্টার আছে, যার মাধ্যমে জাপানের ভিসা প্রক্রিয়া হয়। মেঘনা আলম এ গ্রুপের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করতেন। গ্রেপ্তার সমীরকে ‘চাঁদাবাজির’ মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
বদরুল আলম বলেন, তিন দশক আগে তারা বরিশাল থেকে ঢাকায় আসেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি এবং একজন রাজনৈতিক গবেষক। তার চার মেয়ের মধ্যে মেঘনা সবার বড়।
মেঘনা ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেন। ২০২০ সালে ‘মিস আর্থ বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন। মডেলিং ছাড়াও তিনি উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছিলেন। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি বাসায় থাকতেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মেঘনা ব্যক্তিগত সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধনের অপচেষ্টা করছিলেন। তিনি আরও কয়েকজন বিদেশি কূটনীতিকের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তাদের অনেকে এখন নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

মেঘনার ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিষয়টি স্পর্শকাতর। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ নিয়ে কিছু বলা যাবে না।’
মডেল মেঘনা আলমকে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। কারণ হিসেবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্কে মিথ্যাচার ছড়ানোর মাধ্যমে আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক অবনতির অপচেষ্টা করার কথা বলছে পুলিশ।
শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। ডিএমপির পাঠানো বার্তায় আরও বলা হয়, দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে মেঘনা আলমকে সব আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে। সূত্র: আজকের পত্রিকা