‘আমরা খুবই চিন্তায় আছি। যদি তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য হেফাজতে নেওয়ার প্রয়োজন ছিল, তাহলে তো পুলিশ হাসপাতালেই তাদের নিরাপত্তা দিতে পারত। নাহিদকে হেফাজতে নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত আমাদের কিছু জানানো হয়নি। আমার ছেলেকে নিরাপত্তার জন্য এখানে আনা হয়েছে, সেটি আমরা মানি না। আমি চাই আমার ছেলেকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিক। আমরা চাই প্রতিটি সন্তানকে তাদের মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দিক৷’
রোববার (২৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এভাবেই আকুতি জানিয়ে কথাগুলো বলছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের মা মমতাজ বেগম।
এর আগেও নাহিদকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন আবার তাকে তুলে নেওয়া হয়েছে। আমরা নাহিদের সঙ্গে দেখাও করতে পারিনি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাহিদকে তুলে নিয়ে আসা হয়েছে। তার সঙ্গে আরও দুইজনকে তুলে আনা হয়েছে।”
ডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে চিন্তামুক্ত থাকার জন্য। এ বিষয়ে নাহিদের মা বলেন, “আমরা কীভাবে চিন্তামুক্ত থাকি? সন্তান ডিবির ভেতরে, আমি কীভাবে চিন্তামুক্ত থাকব? আমি আমার সন্তানকে আমার কাছে ফিরিয়ে নিতে চাই। পাঁচজনকে যেন তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।”
নাহিদের পরিবার তাকে নিয়ে এখন কী আশঙ্কা করছে? এ প্রশ্নের জবাবে নাহিদের মা বলেন, “আমার প্রশ্ন নাহিদকে এখানে কেন নিয়ে আসবে? নাহিদের শারীরিক অবস্থা ভালো না, অনেক খারাপ অবস্থা। এই অবস্থায় তাকে হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে আসা হয়েছে।”
এ সময় উপস্থিত নাহিদের এক ফুপু বলেন, “সর্বশেষ আমি নাহিদকে হাসপাতালে দেখে এসেছিলাম। তখন নাহিদের পায়ের ক্ষতগুলো বাজে অবস্থায় ছিল। তখন আমরা নাহিদকে বাড়িতে নিতে চেয়েছিলাম। তখন চিকিৎসকরা বলল, ‘কিছু দিন চিকিৎসার পরে বাড়িতে নিয়ে যাবেন’। নাহিদকে যেদিন ডিবিতে নিয়ে আসা হয়, আমাদের পরিকল্পনা ছিল এর পরের দিন নাহিদকে বাসায় নিয়ে যাব। নাহিদের শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল না। গায়ে জ্বর ও পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা ছিল।”
এদিকে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে তুলে আনা হয়। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আসিফ মাহতাবকেও ডিবি হেফাজতে আনা হয়।
এর আগে শনিবার (২৭ জুলাই) বিকেলে নিউমার্কেট ও সায়েন্সল্যাব এলাকা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে তুলে নেওয়া হয়।
এসব বিষয়ে রোববার (২৮ জুলাই) দুপুরে ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ বলেন, “যাদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা নিয়ে এসেছি, তাদের পরিবারের কাছে অনুরোধ করব, দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। আমরা মনে করি তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা দেখছি। তাদের পরিবার যেন নিশ্চিন্ত থাকে, সেই বিষয়ে আমরা আশ্বস্ত করতে চাই।”