ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির জন্য এক কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সয়াবিন তেল ক্রয়ের প্রস্তাবটিসহ ৭ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে ব্যয় হবে ৮ হাজার ২৬২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
বুধবার (২২ নভেম্বর) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির এক ভার্চুয়াল সভায় প্রস্তাবগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান।
সাঈদ মাহবুব খান বলেন, “অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য ১টি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ৯টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৩টি, বিদ্যুৎ বিভাগের ২টি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১টি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ১টি, স্থানীয় সরকার বিভাগের ১টি এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ১টি প্রস্তাব ছিল। এর মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের ১টি ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ১টি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়নি কমিটি। অনুমোদিত ৭টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ৮ হাজার ২৬২ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৬৫০ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, “আন্তর্জাতিকভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ একমাত্র দরদাতা প্রতিষ্ঠান প্রিন্সিপাল: গ্রিন ন্যাশনাল বিল্ডার্স অ্যান্ড ডেভেলপার্স, ভারতের কাছ থেকে ২ লিটার পেটজাত বোতলে প্রতি লিটার ১৫৪ দশমিক ২৯ টাকা হিসাবে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ে ব্যয় হবে ১৪৩ কোটি ১৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।”
সাঈদ মাহবুব খান বলেন, “আরিচা (বরঙ্গাইল)-ঘিওর-দৌলতপুর-নাগরপুর-টাঙ্গাইল আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথমান ও প্রশস্থতায় উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের একটি প্যাকেজের পূর্ত কাজ ক্রয়ের জন্য এক ধাপ দুই খাম পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি দরপত্র জমা পড়ে। ৪টি দরপত্রই রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লি. প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১১২ কোটি ৮১ লাখ ৯০ হাজার ৭৯২ টাকা।”
অতিরিক্ত সচিব বলেন, “ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভায় ১১ মেগাওয়াট ক্ষমতার বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের দরপ্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। বিল্ড ওন অপারেট পদ্ধতিতে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করবে বেসরকারি খাতে যৌথভাবে সিদ্দিক ফেব্রিক্স লিমিটেড-ইনটেক এনার্জিস এবং সাউদিয়া জার্মান পাওয়ার প্ল্যান্ট লিমিটেড (এসএফ-এলই-এসজিপিপিএল জেভি)। প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট ঘণ্টা) বিদ্যুতের দাম শূন্য দশমিক ১৯১০ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২১ দশমিক ১০৫ টাকা) হিসেবে ২৫ বছর মেয়াদে উদ্যোক্তা সংস্থার কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয়ে ব্যয় হবে চার হাজার ৬৮ কোটি টাকা।”
সভায় ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলায় ১০০ মেগাওয়াট (এসি) সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের ট্যারিফ প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করবে যৌথভাবে বিইআইএইচসিএল, চীন; বিজেডএইচই, ইএনএএম এবং এমএনএস। ২০ বছর মেয়াদে ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য নো ইলেক্ট্রিসিটি, নো পেমেন্ট ভিত্তিতে চুক্তি সম্পাদনের অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ট্যারিফ ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ক্রয় করা হলে ২০ বছর মেয়াদে উক্ত কোম্পানিকে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ১১ দশমিক ০০৫৮ টাকা হিসেবে ২০ বছর মেয়াদে আনুমানিক তিন হাজার ৫৬৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
সাঈদ মাহবুব খান জানান, রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে কাতার থেকে ষষ্ঠ লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। কাতারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের মূল্য নির্ধারণ করে প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম পড়বে ৩৮৩ দশমিক ৮৩ মার্কিন ডলার। সে হিসেবে ষষ্ঠ লটে ৩০ হাজার মেটিক্র টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সারের মোট মূল্য এক কোটি ১৫ লাখ ১৪ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২৭ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৯০০ টাকা।
কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশের কাছ থেকে নবম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কাফকোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের মূল্য নির্ধারণ করে নবম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সারের প্রতি মেট্রিক টনের দাম নির্ধারণ করা হয় ৩৬৩ দশমিক ৬২৫ মার্কিন ডলার। সে হিসাবে মোট ব্যয় হবে এক কোটি ৯ লাখ ৮ হাজার ৭৫০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২১ কোটি ৮ লাখ ৭১ হাজার ২৫০ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব আরও বলেন, “সৌদি আরব থেকে ষষ্ঠ লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুসারে সারের মূল্য নির্ধারণ করে ষষ্ঠ লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সারের দাম নির্ধারণ করা হয়। যা প্রতি মেট্রিক টন ৩৭০ দশমিক ৮৩ মার্কিন ডলার। সে হিসাবে ৩০ হাজার মেট্রিক টন সার আমদানিতে ব্যয় হবে এক কোটি ১১ লাখ ২৪ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১২৩ কোটি ৪৮ লাখ ৬৩ হাজার ৯০০ টাকা।”