রাজধানীসহ সারাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতির দিকে যাচ্ছে। এডিস মশা বাহিত এই রোগটি এখন পর্যন্ত ৫৭ জেলায় সংক্রমণ ছড়িয়েছে। সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্কও ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। শুক্রবার (৭ জুলাই) পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১,২৯৮ এ।
স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল আটটা পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৮২ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন বিভিন্ন হাসপাতালে।
এরমধ্যে ১১০ জন ঢাকার বাইরে থেকে এসেছেন। এছাড়া ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৭২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন।
ওই ২৪ ঘণ্টায় একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানায় অধিদপ্তর। এই তথ্য অনুযায়ী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬৫ জনে। ৭ জুলাই পর্যন্ত ঢাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৫১ জন এবং চট্টগ্রামে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া ময়মনসিংহ, রঙপুর ও বরিশাল এই তিন বিভাগে একজন করে মারা গেছেন এ রোগে।
ঢাকা বিভাগের ১২টি জেলার পাশাপাশি চট্টগ্রাম, ময়মনসিং ও রঙপুর বিভাগের সব জেলায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।
খুলনার ১০টি জেলায়, রাজশাহীর ৬ জেলায়, এবং সিলেট বিভাগের দুটি জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর ১,৫২৮ জনসহ মোট ২,১৬৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৯,০৬৮ জন সুস্থ হয়েছেন বলে জানা গেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওই তথ্য থেকে।
২০১৯ সালে রেকর্ড ১৭৯ জনের মৃত্যু ঘটে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে। এর পরের বছর ২০২২ সালে দেশে সর্বোচ্চ ২৮১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
এদিকে, গতবছর ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্ত হয় ৬২ হাজার ৪২৩ জন। আরোগ্য লাভ করে ৬১ হাজার ৯৭১ জন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারাবছর নগর কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্তভাবে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করেনি। তাই সংক্রমণ বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাক্তন পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রক) বেনজির আহমেদ বলেন, ‘এখন বৃষ্টিপাতের কারণে বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। ফলে এডিস মশার বংশবিস্তার ঘটছে বেশি।’
এই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। ১৭ কোটি মানুষই এখন ডেঙ্গু আক্রান্তের ঝুঁকিতে রয়েছেন।’
সূত্রে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার পর ডেঙ্গুর ভয়াবহ পরিস্থিতি বন্দরনগরী চট্টগ্রামে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হাসেম বলেন, ‘আমরা ডেঙ্গু মোকাবিলায় সক্রিয়ভাবে কাজ করছি।’
‘আমাদের নিজস্ব বিভাগের পাশাপাশি বহিঃর্বিভাগের কর্মীদেরও ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ৪ জন মশকনিধন কর্মী রয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে তারা কাজ করছেন। একিসঙ্গে একটি মশাবিরোধী কর্মসূচিও শুরু করেছেন তারা।’
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব ল্যাব না থাকায় আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছি।’
অন্যদিকে, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।
রাজধানীর দক্ষিণ সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপের মাধ্যমে চিহ্নিত উচ্চ ঝুঁকিপুর্ণ এলাকায় তারা একাধিক ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছেন।
উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম শফিকুর রহমান জানান, ডেঙ্গু মোকাবিলায় মশানিয়ন্ত্রণ কর্মীদের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
রোগীদের বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় অপারেশন পরিচালনা করা হচ্ছে।