সংখ্যালঘুসহ সমসাময়িক বিষয় নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তিকর বয়ানের বিষয়ে দেশটির সরকারকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে পদক্ষেপ নিতে বলেছে বাংলাদেশ।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব এম জসীম উদ্দিন।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রসচিব জসীম উদ্দিন। ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি।
পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক বিষয় তুলে ধরে এম জসীম উদ্দিন বলেন, “বাংলাদেশে জুলাই-আগস্ট বিপ্লব এবং বিপ্লব-পরবর্তী সংখ্যালঘুদের প্রতি কথিত বৈরী আচরণ নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচার, মিথ্যা তথ্য এবং বিভ্রান্তিকর বয়ান রয়েছে, সে বিষয়ে আমরা ভারত সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপের অনুরোধ জানিয়েছি। সেই সঙ্গে আমরা জোর দিয়ে বলেছি যে, বাংলাদেশে বসবাসরত সব ধর্ম নির্বিশেষে স্বাধীনভাবে ধর্ম চর্চা করে আসছে এবং এ বিষয়ে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি এবং অপপ্রচারের সুযোগ নেই। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার সরেজমিনে বাস্তব অবস্থা দেখার ও পর্যবেক্ষণ করার জন্য বিদেশি সাংবাদিকদেরও আহ্বান জানিয়েছে।”
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, “আমরা বলেছি যে, এটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের মন্তব্য সমীচীন নয়। আমি এও স্মরণ করিয়ে দিয়েছি যে, বাংলাদেশ অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য থেকে বিরত থাকে এবং অন্যান্য দেশেরও একই ধরনের শ্রদ্ধাবোধ আমাদের প্রতি দেখানো উচিত।”
বৈঠকে সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রসচিব। তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, প্রতিটি জীবন মূল্যবান। এই লক্ষ্যে ভারত সরকারকে দৃশ্যমান কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আমরা অনুরোধ করেছি। তাছাড়া, আন্তঃসীমান্ত অপরাধ, মাদক পাচারসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কার্যক্রম নির্মূলে ভারতের সহযোগিতাসহ সীমান্ত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা সমাধানে ভারত সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।”
এম জসীম উদ্দিন বলেন, “আজকের আলোচনায় আন্তঃনদী বিষয়সমূহ গুরুত্ব পেয়েছে। আমি তিস্তা নদীর পানি চুক্তি সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছি। গঙ্গা-পানি চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে উত্তীর্ণ হয়ে যাবে। সে প্রেক্ষিতে তা নবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেই। এ ছাড়া আরও যে কয়টি আন্তঃসীমান্ত নদীর পানিবণ্টন সংক্রান্ত চুক্তি দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনাধীন, সেসব সম্পন্ন করার জন্য বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস, উপাত্ত/ডাটা আদান-প্রদানসহ বন্যা প্রতিরোধে ভারতের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করি এবং এ বিষয়ে একটি উচ্চ-পর্যায়ের মেকানিজম গঠন করার বিষয়েও আলোচনা করেছি।”
এম জসীম উদ্দিন আরও বলেন, “ভারত আমাদের অন্যতম বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। ভারতের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য বিদ্যমান ট্যারিফ, প্যারা-ট্যারিফ এর মত বাধাসমূহ দূর করার ওপর আমরা গুরুত্ব আরোপ করেছি। আমরা ভারত থেকে আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করেছি।”