দেশের ওপরে ভারতের প্রভাব বিস্তারের সহযোগী হিসেবে শেখ হাসিনা এক বিশ্বস্ত নাম। তাকে ব্যবহার করেই গত ১৬ বছর দেশের বিভিন্ন কার্যক্রমের ওপর হস্তক্ষেপ করেছে ভারত। যা খুবই অন্যায়। সব সময়ই ভারতকে বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বন্ধ বলা হয়। কিন্তু তা সঠিক নয়। বরং ভারত শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বন্ধু বলে মন্তব্য করেছে ১২ দলীয় জোট।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘ভারতীয় আগ্রাসন বন্ধ ও ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে’ বিক্ষোভ সমাবেশে এ কথা জানান ১২ দলীয় জোটের নেতারা।
এদিন বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোট প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব ও ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম।
নেতারা বলেন, “বাংলাদেশের চারপাশের অভিন্ন নদীতে নিজেদের স্বার্থে বাঁধ দিয়েছে ভারত। খড়ার সময় বাঁধগুলোর মাধ্যমে একতরফাভাবে পানি আটকে দেয়। সেই পানি তারা তাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে সেচের কাজে ব্যবহার করে। ফলে বাংলাদেশের কৃষকরা খড়ার সময় মৌসুমে পানির অভাবে সেচকার্য সম্পাদন করে কৃষি কাজ করতে পারে না। ভারতের মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবে চলমান নদী প্রবাহকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার ফলে বাংলাদেশে মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা প্রস্তাবিত তিস্তা বহুমুখী প্রকল্প চালু করে উত্তরবঙ্গকে মরুকরণ থেকে রক্ষা করব। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে দেশের প্রতিটি নদীকে সারা বছর পানি সংরক্ষণের জলাধার হিসেবে গড়ে তুলব।”
১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, “ডামি নির্বাচনের পর থেকে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়ে সারা দেশে লিফলেট বিতরণ করেছি আমরা। শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে দ্রুত শাস্তি হিসেবে ফাঁসি দেওয়া হোক। কারণ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বসে নেই। তারা নানাভাবে বিভিন্ন কৌশলে ষড়যন্ত্র করছেন।”
শাহাদাত হোসেন সেলিম আরও বলেন, “আনসার বাহিনীর বিদ্রোহে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা উসকানি দিয়েছেন। আমরা সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করব। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে আমরা আছি। প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে আমরা সন্তুষ্ট। কিন্তু অবিলম্বে আওয়ামী লীগের লুটপাট, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার করুন। দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। এরপর জনগণ তাদের মূল্যবান ভোটের মাধ্যমে পছন্দের সরকার গঠন করবে।”
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান বলেন, “বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ ভারতের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন। কিন্তু তাকে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করা হয়। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলব, আওয়ামী লীগের লোকেরা এখনো ষড়যন্ত্র করছে। তাদের কঠোরভাবে দমন করুন। কেননা পরাজিত শক্তি অর্থ ও উসকানি দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে মাঠে নামিয়ে একের পর এক আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত করছে।”
বাংলাদেশ এলডিপির অতিরিক্ত মহাসচিব তমিজ উদ্দিন টিটুর পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, ১২ দলীয় জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন মো. ফারুক রহমান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ, ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুর রাকিব, ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, পিএনপির চেয়ারম্যান ফিরোজ মো. লিটন ও নয়া গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি মাস্টার এম এ মান্নান।