বিশ্বের উন্নত থেকে শুরু করে উন্নয়নশীল, অনুন্নত দেশের প্রধান অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স বা প্রবাসীদের পাঠানো আয়। ৪০টির মতো উন্নত রাষ্ট্রে শ্রমের বিনিময়ে রেমিট্যান্স পাঠায় ১২৫টি দেশের শ্রমিকেরা। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া থেকে বিপুলসংখ্যক প্রবাসীকর্মী বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে কাজ করতে যায়। তাদের সুবাদেই এ অঞ্চল লাভ করে থাকে বৈশ্বিক রেমিট্যান্সের উল্লেখযোগ্য অংশ।
মূলত, দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশ—ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ রেমিট্যান্স প্রাপ্তিতে শীর্ষ দশ দেশের তালিকায় রয়েছে। এর মধ্যে ভারত ২০০৮ সাল থেকেই রেমিট্যান্স উপার্জনে প্রথম। তারা ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষা ও কারিগরি শিক্ষায় অনেক এগিয়ে থাকায় জিডিপিতে রাখছেন ২ দশমিক ৯ শতাংশ অবদান।
অন্যদিকে, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের মানুষ খুবই পরিশ্রমী হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও অনেক পিছিয়ে রয়েছে ভাষাগত জটিলতা ও কারিগরি শিক্ষায়। ফলে রেমিট্যান্স প্রাপ্তিতে ভারত আর পাকিস্তানের চেয়ে পিছিয়ে থাকছে বাংলাদেশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবাসীদের সমস্যার সমাধান, দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি এবং হুন্ডি ব্যবসা প্রতিরোধ করা গেলে রেমিট্যান্সেই বদলে যাবে বাংলাদেশ।
ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) মঙ্গলবার (৭ মে) ওয়ার্ল্ড মাইগ্রেশন রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে ২০২২ সালে রেমিট্যান্স পাওয়ার দিক থেকে শীর্ষ দেশগুলোর তালিকা উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকায় শীর্ষ পাঁচের মধ্যে রয়েছে ভারত, মেক্সিকো, চীন, ফিলিপাইন ও ফ্রান্স। যেখানে বাংলাদেশের অবস্থা নেই।
আইওএমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১১১ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়ে বিশ্বে শীর্ষ স্থান দখল করেছে ভারত। প্রথম দেশ হিসেবে ১০০ বিলিয়ন ও ১১১ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অর্জন করেছে দেশটি। তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মেক্সিকো পেয়েছে ৬১ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স। রেমিট্যান্স গ্রহণে তৃতীয় অবস্থানে থাকা চীন পেয়েছে ৫১ বিলিয়ন ডলার, চতুর্থ অবস্থানে থাকা ফিলিপাইন পেয়েছে ৩৮ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার, আর পঞ্চম অবস্থানে থাকা ফ্রান্স পেয়েছে ৩০ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার।
তালিকার শীর্ষে ভারত থাকলেও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম জনবল রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে রেমিট্যান্স প্রাপ্তিতে বাংলাদেশ রয়েছে পাকিস্তানের পেছনে। তালিকার ষষ্ঠ অবস্থানে থেকে পাকিস্তান পেয়েছে যেখানে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয়, সেখানে বাংলাদেশ তালিকায় অষ্টম অবস্থানে থেকে পেয়েছে ২১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।
প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, বিগত ২০১০, ২০১৫ ও ২০২০ সালেও যথাক্রমে ৫৩ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার, ৬৮ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার ও ৮৩ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার পেয়ে রেমিট্যান্সপ্রাপ্তিতে প্রথম অবস্থানে ছিল ভারত। সর্বশেষ ২০২২ সালে রেমিট্যান্স গ্রহণে প্রথম ১০০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করে ভারত।
এদিকে, রেমিট্যান্সপ্রাপ্তিতে বাংলাদেশ অষ্টম অবস্থানে থাকলেও অভিবাসী পাঠানোর ক্ষেত্রে পিছিয়ে বিশ্বে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। অভিবাসী পাঠানোর ক্ষেত্রে শীর্ষ পাঁচ দেশ হচ্ছে ভারত, মেক্সিকো, রাশিয়া, চীন ও সিরিয়া।
আইওএমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, অভিবাসী কর্মীদের বড় গন্তব্য উপসাগরীয় দেশগুলো। বাংলাদেশ, ভারত, মিসর, ইথিওপিয়া ও কেনিয়া থেকে আসা বেশিরভাগ অভিবাসীই নিয়োজিত হন নির্মাণ, হসপিটালিটি, নিরাপত্তা, গৃহকর্ম ও রিটেইল খাতের কাজে।
আইওএম বলছে, রেমিট্যান্স বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় বহু মানুষের লাইফলাইন হলেও এসব দেশ থেকে যাওয়া অভিবাসী কর্মীরা অনেক ঝুঁকির মধ্যে কাজ করেন। তারা আর্থিক শোষণের শিকার হন, অভিবাসন খরচের কারণে অতিরিক্ত আর্থিক দেনায় ডুবে যান। শুধু তাই নয়, কর্মক্ষেত্রে নিপীড়নের শিকারও হন। পাশাপাশি ‘জেনোফোবিয়া’ বা বিদেশিদের প্রতি ঘৃণার মনোভাবের শিকার হতে হয়।