• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আয়করের ‘থাবা’ উপহার-দানবক্সেও


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২৪, ০৯:৫৪ পিএম
আয়করের ‘থাবা’ উপহার-দানবক্সেও
প্রতীকী ছবি

কাউকে উপহার নেওয়া বা দেওয়ার মধ্যে দারুণ এক অনুভূতি কাজ করে। আবার কাউকে কিছু দান করার মধ্যেও আছে মহত্ত্ব। এটা সামাজিক বৈষম্য কমিয়ে আনা কিংবা সম্পর্ক জোরদার করার ভালো উপায়। তবে উপহারের এই দারুণ অনুভূতিতে এবার চোখ রাঙাবে আয়কর। একই সঙ্গে দানের বেলাতেও আয়কর হানা দেবে।

এবারের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এমনটাই বলা হয়েছে। গত ৬ জুন প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে, যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উপহার বা দান হিসেবে যেকোনো পরিমাণ সম্পদ গ্রহণ করলে নিয়মিত হারে আয়কর দিতে হবে। যা হতে পারে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত।

অবশ্য, উপহার বা দান-ধ্যান যদি স্বামী, স্ত্রী, বাবা-মা ও সন্তানের মধ্যে হয়, সেক্ষেত্রে কাউকে আয়কর দিতে হবে না। তবে অর্থ আইনে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা ও সন্তান ছাড়া দানকারী এবং দানগ্রহীতা উভয়কেই কর দিতে হবে। অবৈধ উপার্জন ঠেকাতে দানকারীর ট্যাক্স ফাইলেও সেই অর্থের উৎস সোর্স উল্লেখ করতে হবে।

চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট এবং এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেস লিমিটেডের পরিচালক স্নেহাশিস বড়ুয়া টিবিএসকে বলেন, “উপহার কর আইন ১৯৯০ অনুযায়ী, দানকারীর জন্য করছাড় পাওয়ার তালিকা রয়েছে। কাজেই দানকারী দানকর প্রদান থেকে অব্যাহতি পেলেও আয়কর আইন ২০২৩-এর আওতায় তাকে কর দিতে হবে।”

এদিকে, দানকর আইনের ২(৬) ধারা অনুযায়ী, ‘দান’ বলতে এক ব্যক্তি কর্তৃক অন্য কোনো ব্যক্তিকে স্বেচ্ছায় অর্থ বা অর্থমূল্যের প্রতিলাভ ছাড়া কোনো স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর বোঝাবে।

বর্তমান আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি কর্তৃক কোনো আর্থিক বছরে করা ২০ হাজার টাকা মূল্যের দানের ওপর কোনো দানকর ধার্য হবে না। প্রস্তাবিত আইনে শুধু দানকারীই এই কর থেকে অব্যাহতি পাবেন।

অবশ্য এনবিআরের কর্মকর্তাদের মতে, আইনে থাকলেও বাস্তবে দানের বিপরীতে কর আদায়ের নজির খুব একটা নেই। প্রস্তাবিত অর্থ আইন অনুসারে, ভাইবোন, তৃতীয় পক্ষ এবং প্রতিষ্ঠানসহ যারা দান পাবেন, তাদের সবাইকে করের আওতায় আনা হবে। এর ফলে যিনি দান করবেন তাকে কর পরিশোধ করতে হবে; একইসঙ্গে যিনি দান গ্রহণ করবেন, তাকেও নিয়মিত হারে আয়কর দিতে হবে।

নতুন বাজেটে আনা প্রস্তাব অনুযায়ী, আয়করের সর্বোচ্চ হার ৩০ শতাংশ। ফলে বড় অঙ্কের দান বা অনুদান করা হলে উভয় পক্ষের ওপর স্বাভাবিকভাবেই করের হারও বেশি হবে। এ ব্যাপারে ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম টিবিএসকে বলেন, “দানের সঙ্গে দুর্নীতির একটি সম্পর্ক আছে। সাধারণত দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয় দানের মাধ্যমে বৈধ করার চেষ্টা করা হয়।”

ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম বলেন, “বর্তমানে যিনি দান করছেন, শুধু তাকেই কর দিতে হয়। তবে নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, যিনি দান গ্রহণ করবেন, তাকেও কর দিতে হবে।”

ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ব্যারিস্টার তানজীব ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদাহরণ টেনে বলেন, “ড. ইউনূস তার ট্রাস্টে দান করার জন্য শেষ পর্যন্ত কর পরিশোধ করেছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের দানের ক্ষেত্রে দাতা এবং ওই ট্রাস্ট—অর্থাৎ দুজনের ওপরই কর আরোপ হবে।”

কয়েকজন আয়কর কর্মকর্তার অভিজ্ঞতা হচ্ছে, মাঠ পর্যায়ে দানকারীর কর ফাইলে ওই সম্পদ আছে কি না, তা যাচাই করা হয় না। আবার আইনে থাকা সত্ত্বেও দান করা হলে ওই দানের ওপর করও আরোপ হয় না।

এমন উদ্যোগকে সমর্থন দিয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “অন্যান্য দেশেও যিনি দান গ্রহণ করবেন, তার ওপর কর আরোপের চর্চা আছে। তবে দান গ্রহণকারীর ওপর কর আরোপের কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়ন করা কঠিন, বিশেষত সম্পদের ক্ষেত্রে। কেউ সম্পদ দান করলে এর প্রকৃত ভ্যালুয়েশন কীভাবে হবে? কম মূল্য দেখিয়ে সেখানেও কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা থাকতে পারে।”

Link copied!