পদ্মা সেতুর উদ্বোধন নিয়ে উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না এ বছর। নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়ে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বাংলাদেশের। ২৮ ডিসেম্বর ঢাকাবাসীর স্বপ্নের মেট্রোরেল চালু হলো। যানজটের নগরীতে ঠিক সময়ে ও নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোর আশা জাগিয়েছে মেট্রোরেল। এদিকে উন্নয়নের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০০ সেতু ও মহাসড়ক উদ্বোধন করেন।
পদ্মা সেতু
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ জুন পদ্মা সেতুটি উদ্বোধন করেন। পদ্মা সেতুর (মূল সেতু) দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দুই প্রান্তের উড়ালপথ (ভায়াডাক্ট) ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। পদ্মা সেতু দিয়ে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াত সহজ হয়েছে, সময়ও কমেছে। চলাচল সহজ করার পাশাপাশি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে পদ্মা সেতু।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে সড়কপথে রাজধানীর নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপনের পর বরিশাল ও খুলনার মানুষ ঢাকায় যাতায়াত করছেন মাত্র ৩ থেকে ৪ ঘণ্টায়। এ সেতুতে অর্থায়নের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল বিশ্ব ব্যাংক, ঋণের চুক্তিও হয়েছিল। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ তোলার পর সরকারের সঙ্গে শুরু হয় সংস্থাটির টানাপড়েন।
দুর্নীতির সেই অভিযোগ কানাডার আদালত কিংবা দেশে দুদকের তদন্তে প্রমাণিত হয়নি। সেতু উদ্বোধনের আগে সেই জটিলতা নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের আক্ষেপ প্রকাশের কথা জানিয়েছিলেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। উদ্বোধনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “পদ্মা সেতু নিছক একটি সেতু নয়, এটা বাংলাদেশের ‘সামর্থ্য আর আত্মবিশ্বাসের প্রতীক।”
মেট্রোরেল
২৮ ডিসেম্বর বর্ণিল আয়োজনে দেশের প্রথম মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে পতাকা নাড়িয়ে ট্রেন চালু করে দিয়ে টিকিট কেটে যাত্রী হয়ে তিনি গন্তব্যেও গিয়েছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধান বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় আরেকটি পালক, আজ বাংলাদেশ তথা ঢাকায় আমরা দিতে পারলাম, সংযোজিত করতে পারলাম। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা।”
জাপানের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার।
১০০ সড়ক সেতু উদ্বোধন
একযোগে একশটি সড়ক সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৭ নভেম্বর বেলা ১১টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি। সেতুগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৫, সিলেট বিভাগে ১৭, বরিশাল বিভাগে ১৪, ময়মনসিংহে ছয়, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী ও রংপুরে পাঁচটি করে, ঢাকায় দুটি এবং কুমিল্লায় একটি রয়েছে। সেতুগুলোর মোট দৈর্ঘ্য ৫ হাজার ৪৯৪ মিটার এবং নির্মাণব্যয় ৮ হাজার ৭৯ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
১০০ মহাসড়ক উদ্বোধন
দেশের ৫০টি জেলায় ১০০টি জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা মহাসড়ক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব মহাসড়কের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২ হাজার ২১ কিলোমিটার। ২১ ডিসেম্বর বেলা ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব মহাসড়ক উদ্বোধন করেন তিনি। ২০২১ কিলোমিটার মহাসড়কের মধ্যে ২০৬ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক, ৬২১ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ১১৯৩ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার জেলা মহাসড়ক। এসব মহাসড়ক নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা।