বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির বার্তা সম্পাদক সীমান্ত খোকনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে তার শয়নকক্ষ থেকে। সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া তার নিথর দেহ। পল্টন থানা পুলিশ মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) আড়াইটার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে। যখন সীমান্ত খোকনের সহকর্মীসহ বন্ধু শুভাকাঙ্ক্ষীরা সেখানে ঘটনার আকস্মিকতায় শোকে নীরব হয়েছিলেন।
পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিরুল আমীন বলছেন, প্রাথমিকভাবে এ ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। পরিবার এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ করেননি।
সীমান্ত খোকনের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার দামিহা ইউনিয়নে। তবে চাকরি ও পেশাগত কারণে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে রাজধানীর চামেলীবাগের ২৩ নম্বর বাড়িতে থাকতেন। ঘটনার সময় পরিবারের সদস্যরাও বাসায় ছিলেন। তবে সবার অগোচরে তিনি গলায় ফাঁস দেন।
সহকর্মী, বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে সীমান্ত খোকন ছিলেন প্রাণবন্ত, চিরতরুণ। সবার সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক ছিল। কারো সঙ্গে কোনো বিষয়ে বিরোধ ছিল- এমন তথ্য কেউ জানেন না। তবে পরিবারের সদস্যরা বলছেন, বেশ কিছুদিন ধরে নানা অসুস্থতায় ভুগছিলেন সীমান্ত খোকন। কিছুদিন ধরে পারিবারিকভাবে আফসেট ছিলেন।
সহকর্মীদের প্রশ্ন কী এমন অভিমান ছিল যে একেবারে নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন সীমান্ত খোকন? তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে নানা কথা আলোচনায় আসছে। সহকর্মীদের কেউ কেউ বলছেন, পৃথিবীর মায়া কেউ সহজে ছাড়তে চান না। সবাই বেঁচে থাকতেই চান। এক্ষেত্রে আত্মহত্যা করার মতো খোকনের এতটা সাহস ছিলই না। যদি এমন কথা সত্য হয়, তাহলে কি খোকন হত্যার শিকার হয়েছেন?
তবে অনেকে বলেন, পেশা আর পারিবারিক দুইদিক দিয়েই সীমান্ত খোকন ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন। তার কয়েকটা বড় অস্ত্রোপচারও হয়েছে। মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসককেও দেখাতেন। এসব জটিলতা থেকে তিনি মুক্তি পেতে চেয়েছিলেন হয়তো।
অবশ্য, গেল জুলাই আর আগস্টে পেশাগতভাবে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে থাকতে হয়েছে দেশের প্রতিটা সাংবাদিককে। অনেকেই মারা গেছেন, আহত হয়েছে বহু সাংবাদিক। সরকার বদলের পর অনেক অফিসে হামলা, ভাঙচুর হয়। গ্রেপ্তার হতে হয় প্রভাবশালী অনেক সাংবাদিককে। প্রচণ্ড অস্থিরতা দেখা দেয় সাংবাদিকতা পেশায়। অনেকে চাকরি হারান। সীমান্ত খোকন অসুস্থ হয়ে অনেকদিন অফিস করছিলেন না বলেও জানা গেছে। তার চাকরি থাকবে না, এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেছিলেন। তার আত্মহত্যার পেছনে এসব কারণ আছে কিনা তা নিয়েও আলোচনা বিতর্ক হচ্ছে।
তবে সীমান্ত খোকনের আত্মহত্যার পেছনে সঠিক কোন কারণ রয়েছে সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরিবারের পক্ষ থেকেই কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। তবে স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নেওয়ার পেছনে ঠিক কী কারণ সেই রহস্য উদঘাটন হওয়া প্রয়োজন বলেই মনে করছেন বন্ধু, সহকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষীরা।