আমাদের আশেপাশে এমন কিছু মানুষ আছেন, যারা প্রতিদিন রাশিফল দেখে দরজার চৌকাঠ পার হন। কিন্তু আপনি যখন দেখবেন রাশিফল দেখে বের হওয়ার পরেও দিন হাঁটছে উলটো পথে। তখন কি করবেন? আপনার মনের অবস্থাই বা কি হবে?
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আর্থিক অসচ্ছলতা একজন ব্যক্তির মানসিক চাপের কারণ হতে পারে। যা সেই ব্যক্তির মেজাজ খিটমিটে করে দেবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নষ্ট করে দেবে তার সৃজনশীল চিন্তা চেতনা। এমন কি শরীরে উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যাও তৈরি করতে পারে। একজন ব্যক্তির আর্থিক অবস্থার সঙ্গে তার মানসিক চিন্তাধারার যোগসাজশ রয়েছে। তা আমরা সবাই জানি।
এবার একটু লক্ষ্য করা যাক, বর্তমান পারিপার্শ্বিক অবস্থার দিকে। গত একমাস ধরে দেশে একের পর এক অবরোধ-হরতাল চলছে। এতে সাধারণ মানুষের আয়ের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে।
অন্যদিকে, নিত্যপণ্যের বাজারে মূল্যবৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মানসিকতা কোন পর্যায়ে যেতে পারে তা আমাদের সবার অনুমেয়।
তবে সেদিক থেকে জাফর ইকবাল নামের একজন রিকশা চালকের গল্পটা একটু ভিন্ন। গান বা সংগীত চর্চা মানুষকে যে মানসিক প্রশান্তি দিতে পারে সেই উদাহরণ এই মানুষটি।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার আওরঙ্গজেব রোডে দেখা গেল এক ব্যক্তি রিকশা চালিয়ে যাচ্ছেন। চায়ের দোকান দেখে রিকশা থামালেন। অর্ডার দিলেন একটি চায়ের। যথারীতি চা শেষ করে সিগারেট ধরিয়ে বসে পড়লেন রিকশায়। এবার অপেক্ষা একজন যাত্রীর।
একদিকে গান বাজছে আর মনের সুখে গুনগুন করছেন, আর দম দিচ্ছেন সিগারেটে। এই ব্যক্তিই জাফর ইকবাল। তার জন্মভূমি উত্তরের জেলা রংপুরে। গত ২০ বছর ধরে তিনি ঢাকায় রিকশা চালাচ্ছেন।
আলাপচারিতায় সংবাদ প্রকাশকে তিনি বলেন, “হরতাল-অবরোধে আয় রোজগার নাই। দুই ঘণ্টা ঘুরে ২০/৩০ টাকা ভাড়া মারি। আগে ৫০ টাকা পর্যন্ত মারছি। করোনার সময়ে ঠিকমতো আয় হতো না। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেশি। তাই গান শুনি আর চিন্তা ভুলে থাকি। আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে- তাকে মেডিকেলে ভর্তি থাকতে হবে। কিন্তু এই গানের কারণে আমার মাথা ঠিক থাকে। গান শোনার সময় যাত্রীরা ডাকলেও শুনতে পাই। দুইজন মানুষ, আল্লাহ ডাল ভাত খাওয়ায় ভালো রাখছে।”
স্বাস্থ্য সেবা বিশেষজ্ঞ ড. ডিসি রায় বলেন, “আর্থিক অবস্থার সঙ্গে মানুষের মানসিক চিন্তাধারার একটি সম্পর্ক রয়েছে। আর্থিক অসচ্ছলতা একজন ব্যক্তির মানসিক চাপের কারণ হতে পারে। এতে ওই ব্যক্তির মেজাজ খিটমিটে হতে পারে। এতে দেখা যাবে, সেই ব্যক্তিকে ভালো কথা বলা হলেও তার খারাপ লাগছে। তিনি সৃজনশীল চিন্তাশক্তির মনোভাব হারিয়ে ফেলতে পারেন। তার রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে পারে।“