• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘আমাকে যারা পিতৃহারা করল, তাদের বিচার চাই’


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মে ২২, ২০২৪, ০২:৫১ পিএম
‘আমাকে যারা পিতৃহারা করল, তাদের বিচার চাই’
বাবার হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেন এমপি আনোয়ারুল আজিমের মেয়ে। ছবি : সংগৃহীত

বাবা হত্যার বিচার চেয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বলেছেন, “আমাকে যারা এতিম করল, আমাকে যারা পিতৃহারা করল, আমি তাদের বিচার চাই।”

বুধবার (২২ মে) রাজধানীর মিন্টু রোডে ডিবি কার্যালয়ের সামনে আহাজারি করে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।

ডরিন বলেন, “আমি জেনেছি যে আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। এটা শুনেই আমি ডিবি প্রধানের কাছে এসেছি। তারা এরইমধ্যে তিনজনকে ধরেছেন। আমি মামলা করব। ডিএমপি কমিশনার, ডিবি প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সবাই আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। ডিবি আন্তরিকতার সঙ্গে বিষয়টি দেখছেন।”

এমপি আজিমের মেয়ে আরও বলেন, “আজকে আমি এতিম হয়ে গেছি। আজকে আমার পড়াশোনা শেষ হয়নি। সবার পরিবার আছে, সন্তান আছে। সবাই জানেন, যার বাবা থাকে না তার কেউ থাকে না, সে এতিম হয়ে যায়। যতই কাছের আত্মীয়, আপন মানুষ থাকুক না কেন বাবা বাবাই। বাপের মতো কেউ আপন হয় না।”

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে ডরিন বলেন, “আমার একটাই অনুরোধ আপনার আমার বাবার হত্যার সুষ্ঠু বিচার করুন। আমি স্বচক্ষে দেখতে চাই কারা আমাকে এতিম করল কেন করল।”

এর আগে আজ সকালে কলকাতার নিউটাউন এলাকা থেকে আনোয়ারুল আজিমের মরদেহ উদ্ধার করে কলকাতা পুলিশ।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ারুল আজিম পশ্চিমবঙ্গে যান ১২ মে। পরদিন থেকে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে আর ফেরেননি জানিয়ে জানিয়ে ১৮ মে কলকাতার বরাহনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন গোপাল বিশ্বাস নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি।

গোপাল বিশ্বাস জিডিতে উল্লেখ করেন, “আনোয়ারুল আজিমের সঙ্গে তার ২৫ বছর ধরে পারিবারিক সম্পর্ক। ১২ মে সন্ধ্যা ৭টার দিকে আনোয়ারুল আজিম কলকাতার মণ্ডলপাড়া লেনে তার (গোপাল বিশ্বাস) বাড়িতে আসেন। তিনি কলকাতায় আসেন ডাক্তার দেখাতে। পরদিন (১৩ মে) স্থানীয় সময় (কলকাতা) বেলা পৌনে দুইটার দিকে ডাক্তার দেখানোর জন্য গোপাল বিশ্বাসের বাড়ি থেকে বের হন আনোয়ারুল আজিম। যাওয়ার সময় তিনি (আনোয়ারুল) বলে যান, দুপুরে খাবেন না। সন্ধ্যায় ফিরে আসবেন। পরে তিনি কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে এসে নিজেই গাড়ি ডেকে চলে যান।”

জিডির তথ্য অনুযায়ী, আনোয়ারুল আজিম সন্ধ্যায় গোপাল বিশ্বাসের বাসায় ফেরেননি। আনোয়ারুল আজিমের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে গোপালকে একটি বার্তা পাঠিয়ে জানানো হয়, বিশেষ কাজে তিনি দিল্লি যাচ্ছেন। সেখানে পৌঁছে তিনি ফোন করে গোপাল বিশ্বাসকে জানাবেন, গোপাল বিশ্বাসের ফোন করার দরকার নেই। পরে ১৫ মে স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ২১ মিনিটে আনোয়ারুল আজিমের নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে আরেকটি বার্তা আসে। তাতে আনোয়ারুল আজিমের দিল্লি পৌঁছানোর কথা জানিয়ে বলা হয়, ‘আমার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন, ফোন করার দরকার নেই।’আনোয়ারুল আজিমের নম্বর থেকে একই বার্তা বাংলাদেশে তার বাড়ির লোকজন এবং ব্যক্তিগত সহকারীকে পাঠানো হয়।

এরপর ১৬ মে আনোয়ারুলের নম্বর থেকে তার ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রউফের নম্বরে একটি ফোন আসে বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বলা হয়, ব্যক্তিগত সহকারী ফোন ধরতে পারেননি। পরে আনোয়ারুল আজিমকে তিনি (ব্যক্তিগত সহকারী) ফোন করেও আর যোগাযোগ করতে পারেননি। পরদিন ১৭ মে আনোয়ারুলের মেয়ে গোপাল বিশ্বাসকে ফোন করে জানান, তার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। তারপর তিনি আনোয়ারুলের পরিচিতদের ফোন করেন। কিন্তু তার কোনো সন্ধান মেলেনি।

গত মঙ্গলবার কলকাতা পুলিশের উপকমিশনার (বারাকপুর দক্ষিণ) অনুপম সিং সাংবাদিকদের বলেন, আনোয়ারুল আজিমের বিষয়ে এখনো কোনো কিছু তারা জানতে পারেননি। ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দপ্তরের (আইবি) সূত্র বলেছে, গত চার–পাঁচ দিনে আনোয়ারুল আজিমের মুঠোফোন দুবার সচল হয়েছে। আসাম ও উত্তর প্রদেশে এগুলোর অবস্থান দেখা গেছে। এর মধ্যে আনোয়ারুল আজিমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস বাবার খোঁজে ভারতে গেছেন বলে পারিবারিক একটি সূত্রে জানান জানা যায়। এমন অবস্থার মধ্যে আজ তার মরদেহ উদ্ধারের খবর আসে।

আনোয়ারুল আজিম ১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মধুগঞ্জ বাজার এলাকায়। পেশার ব্যবসায়ী আনোয়ারুল আজিম আওয়ামী লীগের কালিগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক।

ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে পরপর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
 

Link copied!