• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘দেশ ভালো থাকুক, দেশ ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকব’


মো. মির হোসেন সরকার
প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৩, ০৩:১১ পিএম
‘দেশ ভালো থাকুক, দেশ ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকব’
মহাখালী বাস স্টেশনে শরবত বিক্রেতা মো. ছালেক মিয়া। ছবি-সংবাদ প্রকাশ

“হরতাল-অবরোধ না থাকলে প্রতিদিন ঘুরে ঘুরে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার শরবত বিক্রি করা যায়। এখন হরতাল থাকায় সেই টাকাও আসে না। আজকে সকালে বাসা থেকে বের হয়ে বেলা ১১টা পর্যন্ত দেড় শ টাকার শরবতও বিক্রি করতে পারিনি। একজনের কাছে থেকে অনুরোধ করে ৪০ টাকা বেশি নিয়েছি। তাই পকেটে ১৪০ টাকা আছে। লোকজন না থাকলে বিক্রি হবে কীভাবে, আর টাকা হবে কীভাবে।” সংবাদ প্রকাশের কাছে আক্ষেপের কথাগুলো এভাবেই বলছিলেন শরবত বিক্রেতা মো. ছালেক মিয়া।

তার গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলায়। পরিবার নিয়ে বসবাস করেন রাজধানীর তেজগাঁও নাখালপাড়ায়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে শরবত বিক্রির এ পেশায় আছেন। যা আয় হয়, তা দিয়েই কোনোভাবে সংসার চলে তার। তবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ যাওয়ায় ব্যবসা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি বেড়ে যাওয়ায় সড়কে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি যেমন কমছে, তেমনি তার শরবত বিক্রিও কমে গেছে। তবু সংসার চালানোর তাগিদ ও পরিবারের মুখে দু’বেলা ডাল-ভাত তুলে দেওয়ার আশায় ঘুরে ঘুরে শরবত বিক্রি করেন তিনি।

রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে বেলা সাড়ে ১০টায় শরবতের ঠেলাগাড়ি নিয়ে এখানে সেখানে ঘুরতে দেখা যায় মো. ছালেক মিয়াকে। বিরোধী দলগুলোর ডাকা চলমান হরতাল-অবরোধে ব্যবসায় খুব একটা বেশি সুবিধা করতে পারছেন না তিনি। এমন পরিস্থিতিতেও তার হাস্যোজ্জল চেহারার কারণ জানতে চাইলে, উত্তরে তিনি বলেন, “আমি সব সময়ই এমন, এভাবেই থাকতে চাই। চিন্তা মানুষকে অসুস্থ করে তোলে।”

ব্যবসার খারাপ পরিস্থিতি নিয়ে তিনি আরও বলেন, “টার্মিনালে আসি মানুষ বেশি থাকে। শরবতও ভালো বিক্রি করতে পারি। এখন হরতাল চলায় মানুষ না থাকায় বেচাবিক্রি করতে পারছি না। যা বেচাকেনা হয় তা দিয়ে সংসার চালানো যায় না, খুব কষ্টে আছি।”

বিরোধী রাজনৈতিক দলের ডাকা চলমান হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে ভালো নেই ছালেক মিয়ার মতো নিম্ন আয়ের এমন অনেক মানুষ। যারা পরিবারের সদস্যদের মুখে দু’বেলা ডাল-ভাত তুলে দিতে প্রতিদিন কঠিন লড়াই চালিয়ে যেত, তাদের জন্য এসব রাজনৈতিক কর্মসূচি ‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা’র মতো। 

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে ব্যবসায় খুব একটা বেশি সুবিধা করতে না পারায় সংসার নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে এসব মানুষদের।

মহাখালী বাসস্টেশনে কুলফি মালাই বিক্রেতা মো. নজর আহমেদ (ছদ্মনাম)

রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঘুরে বাংলার ঐতিহ্যবাহি বাটি কুলফি আইসক্রিম (কুলফি মালাই) বিক্রি করছেন মো. নজর আহমেদ (ছদ্মনাম)। স্বাভাবিক দিনে প্রতিদিন সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকার আইসক্রিম বিক্রি করতে পারলেও এখন হরতাল থাকায় ১ হাজার ৫০০ টাকাও বিক্রি করতে পারছেন না তিনি।

চোখেমুখে অসহায়ত্বের ছাপ নিয়ে মো. নজর আহমেদ (ছদ্মনাম) সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “স্বাভাবিক দিনে ঘুরে ঘুরে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকার আইসক্রিম বিক্রি করলে হাজারখানেক টাকা লাভ করা যায়। কিন্তু এখন সেই লাভ নেই। বিএনপির ডাকা হরতালে এখন ১ হাজার ৫০০ টাকা বিক্রি করাও কঠিন। তবু যদি ১ হাজার ৫০০ টাকা বিক্রি করা যায়, লাভ হয় ৪০০ টাকার মতো। বাজারে এখন সব জিনিসেরই দাম বেশি। এর মাঝে ৪০০ টাকা লাভ করে সংসার নিয়ে চলা যাবে আপনিই বলেন?

তিনি আরও বলেন, “আমি থাকি মহাখালী সাততলা বস্তিতে। তবু এই ইনকাম দিয়ে চলতে পারি না। আর যারা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকে, তারা কীভাবে সংসার নিয়ে বেঁচে আছে। এই হরতাল-অবরোধ আমাদের জন্য ভালো নয়। আমরা ইনকাম করতে পারি না। আমরা চাই দেশ ভালো থাকুক। কারণ, দেশ ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকতে পারব।”  

Link copied!