সোমালিয়ার উপকূলে ২৩ নাবিকসহ বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ জিম্মি করার পর নানা নাটকীয়তা ঘটনা ঘটেছে। অবশেষে ৩২ দিন পর শনিবার (১৩ এপ্রিল) বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত তিনটার দিকে জাহাজটি থেকে নেমে যায় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। ফলে ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জিম্মিমুক্ত হয়। দীর্ঘ একমাস ধরে কী ঘটেছিল জিম্মি নাবিকদের সঙ্গে- এমন কৌতুহল সবারই। রোববার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমভি আবদুল্লাহর মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। জানিয়েছেন কীভাবে জাহাজটি মুক্ত করার জন্য কী কী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে শাহরিয়ার জাহান রাহাত জানান, শনিবার জাহাজটি থেকে সোমালিয়ার জলদস্যুরা নেমে যাওয়ার পরপরই ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুটি যুদ্ধজাহাজের পাহারায় এমভি আবদুল্লাহ সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হারমিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। তবে আগে এক মাস একেবারেই নির্ঘুম কেটেছে জলদস্যুদের সঙ্গে সমঝোতা করে জাহাজটি ছাড়িয়ে আনতে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে জাহাজটি জিম্মি করার পর প্রথম দিন থেকেই মালিকপক্ষ কাজ শুরু করে। আন্তর্জাতিক নানা সংস্থার সহায়তা নেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি তদারকির নির্দেশ দিয়েছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী- তিনজনই সব সময় সহযোগিতা করে আসছিলেন।
কেএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও বলেন, নাবিকদের নিরাপত্তা নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন ছিলাম। আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর অভিযানের কথা শুনে দ্রুত পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছি। আধা ঘণ্টার মধ্যেই অভিযানের প্রস্তুতিতে থাকা যুদ্ধজাহাজ দ্রুত সরে গেছে। কারণ, অভিযান হলে নাবিকদের জীবনের ঝুঁকি বেড়ে যেত।’
সংবাদ সম্মেলনে কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম বলেন, ‘জাহাজের অবস্থান আমরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে আসছিলাম। নাবিকদের মুক্ত করতে সোমালিয়া, কেনিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র- এই চার দেশের নিয়মকাণুন মেনেই সমঝোতা হয়েছে। সবকিছুই বৈধভাবেই শেষ হয়েছে। তবে সমঝোতার শর্ত অনুযায়ী অনেক কিছু আমরা প্রকাশ করতে পারছি না।’
মেহেরুল করিম আরও বলেন, সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর শনিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ৯টি স্পিডবোটে একে একে নেমে যায় ৬৫ জলদস্যু। মুক্ত হয় ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ। শাহরিয়ার জাহান বলেন, জাহাজটি ১৯ বা ২০ এপ্রিল আরব আমিরাতের আল হারমিয়া বন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। সেখান থেকে উড়োজাহাজে বা একই জাহাজে করে নাবিকদের চট্টগ্রামে ফিরিয়ে আনা হবে। এটি নির্ভর করছে নাবিকদের ওপর, তাঁরা কীভাবে ফিরে আসতে চান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কেএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক করিম উদ্দিন ও সরওয়ার জাহান রোকন, গণমাধ্যম উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম প্রমুখ।