বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে শনিবার বিক্ষোভ এবং রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (২ আগস্ট) রাতে আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ এমন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। একই সঙ্গে দেশের সব মানুষকে সংগঠিত হয়ে কর্মসূচি সফল করার আহ্বানও জানান তিনি।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ এক ভিডিও বার্তায় অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, অসহযোগ আন্দোলন বলতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ঘোষিত ৯ দফা দাবি আদায়ের জন্য চূড়ান্ত আন্দোলন বোঝানো হয়েছে। অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে শাসকগোষ্ঠীর ওপর জনগণের চাপ সৃষ্টি করে দাবিগুলো মানতে বাধ্য করা হবে। সব বিষয়ে সরকারকে সহযোগিতা করা বন্ধ করে দেওয়া হবে। এই আন্দোলন অহিংস পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। এর মধ্য দিয়ে জনগণ সরকারের কোনো নির্দেশনা আর মানবে না।
তিনি বলেন, কোনো জনগণ ইউটিলিটি বিল দেবেন না। বিদ্যুতের লাইন কেটে দিলে মোমবাতি জ্বালিয়ে কাজ করবেন। গ্যাস বন্ধ করলে কাঠ দিয়ে রান্না করবেন।
এই সমন্বয়ক আরও বলেন, অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণ সরকারের কোনো কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বা সহযোগিতা করবে না। কেউ ব্যাংক খুলবে না, কর পরিশোধ করবে না এবং স্কুল-কলেজেও যাবে না।
সরকারের সব কার্যক্রমকে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে বয়কট করা হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশের ইতিহাসে অসহযোগ আন্দোলন
বাংলাদেশের ইতিহাসে অসহযোগ আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বিশেষ করে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এই আন্দোলনের প্রভাব ছিল বিশাল।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের পর শুরু হওয়া অসহযোগ আন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কাজ করেছে।
এই আন্দোলনের মাধ্যমে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানের সরকারের সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিল অর্থনৈতিক বয়কট। আন্দোলনকারীরা পশ্চিম পাকিস্তানের পণ্য বর্জন করে এবং সরকারি কর্মচারীরা তাদের কাজ বন্ধ করে দেয়। এর ফলে থেমে যায় সব প্রশাসনিক কার্যক্রমও।
একই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া সে সময় তৈরি হয়েছিল বিরাট গণজাগরণও।
ভারতের ইতিহাসে অসহযোগ আন্দোলন
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামেও মহাত্মা গান্ধী কর্তৃক পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ইতিহাস থেকে জানা যায়, মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে ১৯২০ সালে এই আন্দোলন শুরু হয়। যার মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে অহিংস প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। এ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি অফিস বর্জন করা হয়, সরকারি চাকরি থেকে পদত্যাগ করা হয় এবং কর দেওয়া বন্ধ করা হয়। ব্রিটিশ পণ্য বর্জন করে স্বদেশী পণ্য ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয় ভারতীয় অসহযোগ আন্দোলনে।